ডাকসুতে গায়ের জোরে ভোট নেবে, খাতির করে ৪/৫টা দেবে: মান্না

মাহমুদুর রহমান মান্না
মাহমুদুর রহমান মান্না

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘১১ তারিখ ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) নির্বাচন হবে। হলের মধ্যে ভোট হবে। যদি ভোট দিতে যান, বলবে আপনি যান আপনার ভোট লাগবে না। কিছু করতে পারবেন না। আমরা ৩০ তারিখের ভোটকে বলেছি ডাকাতি, কিন্তু এখানে দিনের বেলায় ভয়ভীতি দেখিয়ে, গায়ের জোরে ভোট নেবে। খাতির করে অন্যদের হয়তো চার-পাঁচটা ভোট দিয়ে দেবে।’

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আজ শুক্রবার নাগরিক ঐক্যের ঘোষণাপত্র প্রকাশ ও আলোচনা সভায় ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না এসব কথা বলেন। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মুক্তির লড়াই-এ ঐক্যবদ্ধ হউন’ শিরোনামে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করে নাগরিক ঐক্য।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ডাকসু নির্বাচন ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের মতো হবে। ১০ বছরের ছাত্র রাজনীতির যে বন্ধ্যত্ব, স্থবিরতা, গতিহীনতা—সে কারণে এই পরিণতি হবে। ১০ বছর ধরে একটি দল ক্ষমতায় থেকে হল দখল করেছে, ক্যাম্পাস দখল করেছে। ভার্সিটির সব ছাত্র সংগঠনের বিকাশ নষ্ট করেছে। তিনি বলেন, এটাকে গড়ে তুলবেন কীভাবে? এই নির্বাচনকে সুযোগ মনে করে গড়ে তোলা যাবে? হয়তো যাবে, যদি পারে। আমরা ৩০ তারিখের ভোটকে বলেছি ডাকাতি, কিন্তু এখানে দিনের বেলায় ভয়ভীতি দেখিয়ে, গায়ের জোরে ভোট নেবে। খাতির করে চার-পাঁচটা ভোট দিয়ে দেবে। ১৯টি হলের মধ্যে দুই-তিনটি হল না হলে দিয়ে দেবে। তারপরে বলবে যে, গণতান্ত্রিকভাবে ভোট হয়েছে, না হলে ওরা জিতল কীভাবে?

ডাকসুর সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এমন নির্বাচনের মাধ্যমে কেউ ভিপি, কেউ জিএস হবে। একটা বড়াইয়ের ভাব হবে। গোটা ছাত্রসমাজ যে পদদলিত, পরাস্ত হয়ে গেল—সেটা মনে রাখার আর কারণ চলবে না।

মাহমুদুর রহমান মান্না আরও বলেন, ৩০ তারিখ বা ‘২৯ তারিখ রাতের’ ভোট ‘ডাকাতি’ জনগণের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রযন্ত্রের যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে নেমেছিল আওয়ামী লীগ। যারা মনে করেছে এই রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে আজীবন রাষ্ট্রযন্ত্র চালাবে, তারা ভুল করেছে। এই রাষ্ট্রযন্ত্রের কাজই হলো নড়েচড়ে তারপরে স্থান পরিবর্তন করে। তিনি বলেন, ‘এই পুলিশ, যে পুলিশ লীগ ছাড়া আওয়ামী লীগ থাকবে না। আওয়ামী লীগ পুলিশ লীগ ছাড়া চলবে না। তখন আওয়ামী লীগ নতুন করে গঠন করে চলতে পারবে? অপেক্ষা করুন। অনেক দেখেছি। এই পুলিশ, র‍্যাব যা বলেন, ওরা ক্ষমতাসীনদের পূজা করে আর কারা ক্ষমতায় আসছে তার সঙ্গে তলে তলে লাইন মারে।’

নিজেদের পরাজয়ের বিষয়ে মান্না বলেন, ‘আমাদের অনেকে প্রশ্ন করে, এই ভোটে গিয়ে লাভ হলো? আমি বলি এই ভোটে গিয়ে লাভ হলো কেমন? ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না গিয়ে ভালো না মন্দ করেছি, সে বিতর্কে যাচ্ছি না। কিন্তু মানুষকে সরকার বলতে পেরেছে ওরা তো ভোটেই আসেনি। আওয়ামী লীগ ভোট চুরি, ডাকাতি করল, অন্য দলের কোনো অধিকার রাখেনি। এবার আমরা বলতে পেরেছি, ডাকাত। সরাসরি ডাকাত। এই সরকার বৈধ না, পার্লামেন্টও বৈধ না। কোনো একজন মানুষ নেই দেশে যিনি দ্বিমত পোষণ করবেন।’ তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগের লোকেরাই বলেন তাদের নিজেদেরই মন খারাপ হয়ে গেছে। পরিচিত অনেকে বলেছে, নির্বাচন দেখে তাদের মন খারাপ।

আলোচনা সভায় আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, জনগণের ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সবচেয়ে ভীত সরকার। কারণ তার মধ্যে ভেজাল আছে। যার যত ভেজাল, তার তত ভয়। আমাদের এত ভীত হওয়ার কারণ নেই। তিনি বলেন, ‘এরশাদ সরকারের সময় আমাকে বন্দুকের সামনে পড়তে হয়েছিল। বিএনপির আমলের আটটি সেলাই পড়েছে। এবার সরকার আমাকে নতুনভাবে আপ্যায়ন করেছে। যে সরকারই ক্ষমতায় আসে, সেই সরকারই আমাকে শত্রু ভাবে। যখন কেউ ক্ষমতায় থাকে না, তখন বন্ধু ভাবে।’

নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এস এম আকরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক সি আর আবরার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক রাশেদ আল মাহমুদ প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।