জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলনে নারীর জয়গান

সমবেত সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের অষ্টাত্রিংশ বার্ষিক সম্মেলন। উন্মুক্ত মঞ্চ, শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা, ৮ ফেব্রুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো
সমবেত সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের অষ্টাত্রিংশ বার্ষিক সম্মেলন। উন্মুক্ত মঞ্চ, শিল্পকলা একাডেমি, ঢাকা, ৮ ফেব্রুয়ারি। ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীতে তিন দিনব্যাপী শুরু হয়েছে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের ৩৮তম সম্মেলন। এতে সংগীত প্রতিযোগিতা পর্বে অংশ নিচ্ছে সাড়ে চার শ প্রতিযোগী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংগত কারণে উঠে আসে নারী দিবসের কথা, উচ্চারিত হয় নারীর জয়গান।

শুক্রবার সকালে শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত মঞ্চে এই সম্মেলনের উদ্বোধন হয়। এতে সারা দেশ থেকে সম্মিলন পরিষদের ৬১টি শাখার সদস্যরা অংশ নেন। সংগীত প্রতিযোগিতার পাশাপাশি অনুষ্ঠানজুড়ে থাকছে রবীন্দ্রনাথের গান, আলোচনা, আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশনা।

‘আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া’ এ সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা করেন শিল্পীরা। উৎসবের উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল। পরিষদের সভাপতি সন্‌জীদা খাতুনের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল ইসলাম। ‘আগুনের পরশমণি’ গানের সুরে প্রদীপ প্রজ্বালন করে উৎসবের উদ্বোধন করা হয়।

মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি ছেলে ও মেয়েরা সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়। কিন্তু এসব সত্ত্বেও এগিয়ে যাওয়া শুরু হয়েছে। সেই শুরুটা বোঝা যায় বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফলে। সেখানে মেয়েরা এগিয়ে। যে সমাজে নারী-পুরুষ একসঙ্গে এগিয়ে যায়, সেই সমাজে অগ্রগতি কেউ রোধ করতে পারে না। বিশ্বের সকল মেয়েকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি পৃথিবীকে টিকিয়ে রাখার জন্য।’

প্রাত্যহিক জীবনে রবীন্দ্রনাথের গুরুত্ব তুলে ধরে জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমার এমন একটা দিনও কাটে না রবীন্দ্রসংগীত না শুনে। যে মানুষটি রবীন্দ্রসংগীত উপভোগ করতে পারে না, তার মতো দুর্ভাগা আর কেউ নেই। ছোটবেলায় দেখেছি আমাদের বাসায় বয়স্ক লোকের ছবি। সে আমার দাদা বা নানা কেউ নন—তিনি রবীন্দ্রনাথ। সেই শিশুকাল থেকেই আমাদের মাঝে রবীন্দ্রনাথ পড়ার ধারা চালু করেছিলেন বাবা। কিন্তু আমার দুঃখ হয়, নতুন প্রজন্ম পাঠ্যবইয়ে স্থান পাওয়া গল্প কবিতা ছাড়া রবীন্দ্রনাথের অন্য কোনো লেখা পড়ে না।’

সন্‌জীদা খাতুন বলেন, ‘আমাদের সাধনা সিদ্ধির পথে চলেছে। শুরুতে এই সংগঠনের কাজ ঢাকাকেন্দ্রিক ছিল। এখন সারা দেশে ছড়িয়েছে। সংস্কৃতির চর্চা চলছে। সংস্কৃতির চর্চা মানুষকে ভালোবাসতে শেখায়। সমাজের অনাচার দূর করতে সংস্কৃতি একটা আশ্রয়। সেই সংস্কৃতির আশ্রয়ে আমরা সারা দেশের মানুষকে মৈত্রীর বন্ধনে আবদ্ধ করতে চাই। সারা দেশে রবীন্দ্রসংগীত চর্চা ও প্রশিক্ষণ যে হচ্ছে, তাই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বুঝতে পারি। বছরের একটা সময়ে এসে পরিচিত মুখগুলো দেখে মনটা ভরে যায়।’

বুলবুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ব নারী দিবসের দিনটিতে এই সম্মেলন শুরু হলো। রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন একজন নারী। ছায়ানট ও রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের মতো দুটি বড় সংগঠনের সভাপতিও একজন নারী। এ দুই ক্ষেত্রেই আমরা নারীর এগিয়ে চলার বার্তা পাই।’

উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে পরিবেশিত হয় গীতি-আলেখ্য ‘বিশ্বভরা প্রাণ’। এর সংগীত পরিচালনায় ছিলেন লাইসা আহমদ লিসা, নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর শুরু হয় কিশোর বিভাগের সংগীত প্রতিযোগিতা। বিকেলের অধিবেশনে সংগীত পরিবেশন করে গানের দল রবিরশ্মি। এ ছাড়া ছিল আবৃত্তি ও নৃত্যানুষ্ঠান। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শেষ হয় প্রথম দিনের অধিবেশন।

শনিবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের সকালে অনুষ্ঠিত হবে সাধারণ বিভাগের প্রতিযোগিতা। বিকেলে রয়েছে প্রতিনিধি সম্মেলন। এরপর রয়েছে সেমিনার। রবীন্দ্রনাথের গানের ‘সজীব মূর্তি’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করবেন ড. অসীম দত্ত। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।