তানিয়াকে ফেরত পাঠাতে চায় আফগান সরকার

>

• বিদেশের মাটিতে জঙ্গি
• ছয় বছর ধরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ নেই তানিয়ার
• দুই স্বামী তালেবান ও আল–কায়েদার সদস্য 

জঙ্গিবাদ দমন অভিযানে তানিয়া ফারহানা ওরফে এমা (৩১) নামের এক বাংলাদেশি তরুণীকে গ্রেপ্তার করেছে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী। তানিয়া ফারহানাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে আফগানিস্তান সরকার। চিঠি পাওয়ার পর তানিয়া ফারহানা আসলেই বাংলাদেশের নাগরিক কি না, তা যাচাই করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বিষয়টি পরীক্ষা–নিরীক্ষা করছে।

জানা গেছে, ইয়েমেনে স্বামী ভালো বেতনে চাকরি পেয়েছেন—পরিবারকে এ কথা বলে প্রায় ১০ বছর আগে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন তানিয়া। দেশ ছাড়ার পর শুরুতে তিন বছর বিভিন্ন নম্বর থেকে মাসে একবার করে মায়ের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলেও ২০১২ সালের পর তানিয়া বা তাঁর স্বামীর আর কোনো খোঁজ পায়নি তাঁদের পরিবার।

আফগান সরকারি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে পাকিস্তানের কোয়েটায় বসবাসের সময় তালেবানদের বিরুদ্ধে আফগানিস্তান সরকারের অপারেশনের সময় হেলমেন্দ প্রদেশে তানিয়ার স্বামী সাইফুল ইসলাম ওরফে আবু ইব্রাহিম মারা যান। স্বামীর মৃত্যুর পর তানিয়া ওই প্রদেশের বারমাচা নামের আরেকটি জেলায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন এবং সেখানে শফিক নামের একজনকে বিয়ে করেন।

এসব বিষয় জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সম্প্রতি একটি চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশে অবস্থিত আফগানিস্তান দূতাবাস। চিঠিতে বলা হয়েছে, সাইফুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ের দুই বছর পর ২০০৯ সালে তাঁরা পাকিস্তানে যান এবং সেখানে বাংলাদেশি তালেবান নেতা ‘তারেক ভাইয়ের’ সঙ্গে আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী উত্তর ওয়াজিরিস্তানে থাকতে শুরু করেন। এরপর ২০১৫ সালে আফগানিস্তানে সরকারের অভিযানে স্বামী সাইফুল ইসলাম মারা গেলে শফিক নামের একজন বাংলাদেশিকে বিয়ে করেন। কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করা শফিক আল–কায়েদার সদস্য। আর আগের স্বামী সাইফুল ছিলেন তালেবান সদস্য। তানিয়াও জঙ্গিবাদে জড়িয়ে গেছেন। চার সন্তান রয়েছে তাঁদের।

তানিয়ার মা নাজমা বেগমের সঙ্গে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘তানিয়ার সঙ্গে ২০১২ সালের পরে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। তানিয়া ও সাইফুল একেক সময় একেক নম্বর থেকে ফোন করত। ফোন নম্বর চাইলে দিত না।’ তাঁরা জানতেন, তানিয়া ও তাঁর পরিবার ইয়েমেনে আছেন। নাজমা বেগম মেয়ের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমরা জানতাম ওর দুই মেয়ে। এমনকি ওর স্বামী কবে মারা গেছে তাও জানি না। প্রায় ছয় বছর পর গত ৭ জানুয়ারি সরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা এলে জানতে পারি যে তানিয়া আফগানিস্তানে গ্রেপ্তার হয়েছে। সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা গত দেড় মাসে বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছেন। তাঁরা মেয়ের কাবিননামাসহ বিভিন্ন তথ্য চেয়েছেন। আমার মেয়ে বলেছে সে বাংলাদেশি, বাংলাদেশে ফিরতে চায়। তাকে দেশে ফেরাতে সরকার চেষ্টা করছে বলেও তাঁরা জানিয়েছেন।’

তানিয়া ফারহানাকে আফগানিস্তান থেকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। তানিয়া যদি জঙ্গি হয়ে থাকে তবে তাঁরা কেন ফেরত পাঠাতে চাইছেন তা আমাদের বুঝতে হবে। এ ছাড়া তানিয়া বাংলাদেশের নাগরিক হতে পারে, কিন্তু ওর সন্তানেরা তো আর বাংলাদেশের নাগরিক নয়। তাদের দেশে আনা হবে কি না সেটাও দেখতে হবে।’