এবারও জলাবদ্ধতা হবে ঢাকায়

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি
>* প্রতিবছরই ডিএসসিসি ও ওয়াসা জলাবদ্ধতা নিরসনে খরচ করছে বিপুল অর্থ
* সমস্যাটির নিরসন হচ্ছে না
* জলাবদ্ধতা দূর করতে ডিএসসিসি বড় অঙ্কের টাকা খরচ করছে

এবার বর্ষাতেও ঢাকার অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা হবে। বিশেষ করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। এই শঙ্কার কথা জানিয়েছে ঢাকা ওয়াসা ও ডিএসসিসির দায়িত্বশীল সূত্র।

অথচ শান্তিনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দূর করতে ডিএসসিসি প্রতিবছরই বড় অঙ্কের টাকা খরচ করছে। আর ঢাকা ওয়াসা সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্ট ও গভীর নর্দমা পরিষ্কারে সরকারের কাছ থেকে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের থোক বরাদ্দ। গত ২০১৫ সাল থেকে ব্যাপকভাবে এই প্রক্রিয়া চলছে। ডিএসসিসি এই সময়ে খরচ করছে প্রায় ৩০০ কেটি টাকা। আর ওয়াসা গত তিন বছরে এই খাতে খরচ করছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা। তবে জলাবদ্ধতা নিরসন হয়নি।

আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ঢাকায় জলাবদ্ধতা সহনীয় মাত্রায় রাখতে গত ফেব্রুয়ারি থেকে সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্ট ও গভীর নর্দমা পরিষ্কারের কাজ শুরু করেছে ঢাকা ওয়াসা। এখন ফকিরাপুল এলাকায় রাতেরও কাজ চলছে। গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চতুষ্কোণ ম্যানহোলের ঢাকনা খুলে কাজ করা হচ্ছে। সেখানে একটি এক্সকাভেটরও রয়েছে।

 অন্যদিকে দুই সিটি করপোরেশনও জলাবদ্ধতা রোধে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সংস্থাগুলোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মতে, এবারও ঢাকার অনেক স্থানে জলাবদ্ধতা থাকবে। কারণ ভারী বৃষ্টি হলে তাৎক্ষণিকভাবে পানি ধারণ করার জন্য শহরে উপযুক্ত জলাধার নেই। আর ভারী বৃষ্টির পানি টেনে নেওয়ার পাম্পগুলোর ক্ষমতাও সীমিত।

ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ বিভাগের সূত্রমতে, ফেব্রুয়ারি থেকে আসন্ন বর্ষায় জলাবদ্ধতা রোধের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু ভারী বৃষ্টি হলে মতিঝিল ও আশপাশে এবং মৌচাক ও আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না। আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে বিশাল জায়গাজুড়ে জলাধার ছিল। বৃষ্টির পানি সেখানে গিয়ে জমা হতো। পরে বিভিন্ন খাল দিয়ে সেই পানি পৌঁছাত বালু নদে। এখন এসব খাল ভরাট ও দখল হয়ে গেছে। পরিষ্কার করলেও অল্প ‌দিনেই আবার আবর্জনায় ভরে যায়। ফলে ভারী বৃষ্টির পানি বিভিন্ন সড়কেই আটকে থাকে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সূত্রমতে, মতিঝিল ও আশপাশের এলাকার বৃষ্টির পানি টেনে নিতে পাম্পস্টেশনের যে ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন, তা নেই। ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আখতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এ এলাকার পানি যাওয়ার একটিই পথ (আউটলেট) আছে জনপদে। সেখানে ওয়াসার তিনটি পাম্প আছে। এগুলোর পানি টানার সার্বিক ক্ষমতা প্রতি ঘণ্টায় ৫৪ হাজার কিউবিক মিটার, কিন্তু প্রয়োজন ১ লাখ কিউবিক মিটারের বেশি। ফলে ৬০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলে মতিঝিলসহ আশপাশের পুরো এলাকায় জলাবদ্ধতা হবেই। তিনি অবশ্য বলেন, ডিএসসিসি এলাকায় পাইপলাইন ও ভূ-উপরিস্থ মিলে প্রায় যে ১ হাজার কিলোমিটার নর্দমা রয়েছে, তা নিয়মিত পরিষ্কার রাখা হচ্ছে।

ডিএসসিসি প্রতিবছরই জলাবদ্ধতা রোধে বিস্তর টাকা খরচ করছে। এর মধ্যে গত বছর মেগা প্রকল্পের আওতায় পুরানা পল্টন, বিজয়নগর, কাকরাইল, শান্তিনগর, রাজারবাগ, মৌচাক, মালিবাগসহ আশপাশ এলাকায় ৭০ কোটি টাকা খরচ করে ১২ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণ করেছে ডিএসসিসি। এ ছাড়া নর্দমা পরিষ্কারের জন্য ১৮ কোটি টাকায় দুটি যন্ত্রও কেনা হয়। এর আগে ২০১৫ থেকে দুই বছরে বিভিন্ন প্রকল্পে খরচ করে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। ঢাকা ওয়াসাও গত তিন বছরে সরকার থেকে ৮০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ নিয়ে বক্স কালভার্ট ও নর্দমা পরিষ্কার ও খাল খননে খরচ করে।

এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) কিছু এলাকায় এবার জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সমস্যাটি পুরোপুরি নিরসন হবে না। গুলশানে ডিএনসিসি পর্যাপ্ত গভীর নর্দমা নির্মাণ করেছে। বাড্ডায়ও করেছে। আগারগাঁওয়ে কিছু কাজ বাকি। এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে মিরপুর এলাকায় জলাবদ্ধতা হবে।