একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: প্রার্থীদের ব্যয়ের হিসাব পৌঁছায়নি ইসিতে!

নির্বাচনের পর দুই মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে (ইসি) এসে পৌঁছায়নি। এ নিয়ে ইসিরও কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। প্রার্থীদের ব্যয়ের হিসাব চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে চিঠিও পাঠায়নি এই সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

প্রার্থীরা তাঁদের ব্যয়ের হিসাব বিবরণী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন কি না, তা জানতে চেয়ে ইসি রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি দিয়ে থাকে। অতীতে সময়মতো ব্যয়ের হিসাব কমিশনে না পৌঁছালে ইসি থেকে চিঠি দিয়ে তাগিদ দেওয়া হতো।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৪৪সি ধারা অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনের বিজয়ী প্রার্থীদের নাম গেজেট প্রকাশের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব বিবরণী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হয়। একই সময়ে হিসাব বিবরণীর একটি অনুলিপি সত্যায়িত করিয়ে ডাকযোগে (রেজিস্টার্ড) ইসিতে পাঠাতে হবে।

কিন্তু ইসি সূত্র জানিয়েছে, হিসাব বিবরণীর কোনো সত্যায়িত অনুলিপি ইসিতে আসেনি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর। এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন প্রায় দুই হাজার প্রার্থী। ভোট শেষে বিজয়ী প্রার্থীদের নামে গেজেট প্রকাশ হয় ১ জানুয়ারি। আইনের হিসেবে প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব ৩১ জানুয়ারির মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়ার কথা। আর এই হিসাব বিবরণী ইসিতে যে তারিখেই এসে পৌঁছুক না কেন, তা ৩১ জানুয়ারির মধ্যেই ডাকঘরে গিয়ে রেজিস্টার্ড করতে হবে।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে জমা পড়েছে কি না, তা ইসির পক্ষে জনে জনে বলে সংগ্রহ করা সম্ভব নয়।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বলেন, আইনে বলা আছে ৩০ দিনের মধ্যে প্রার্থীদের ব্যয়ের হিসাব রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে। কিন্তু এর অনুলিপি ইসিতে কত দিনের মধ্যে এসে পৌঁছাতে হবে, সে বিষয়টি স্পষ্ট করা নেই। তাই বলে অনুলিপি ইসিতে একেবারেই আসবে না, তা তো হতে পারে না। কারণ, একজন প্রার্থী আদৌ হিসাব বিবরণী জমা দিয়েছেন কি না, তা জানার জন্যই ইসির কাছে একটি কপি আসতে হবে। সে জন্যই ইসিকে উদ্যোগী হয়ে তাগিদ দিতে হবে। যাতে প্রার্থীরা ব্যয়ের হিসাব দিতে বাধ্য হন।

সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদদের হলফনামা ওয়েবসাইটে নেই:

আইন অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা পড়ার পরপর প্রার্থীদের হলফনামা ইসির নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশের বিধান আছে। এই বিধান আইনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে উচ্চ আদালতের নির্দেশে। কিন্তু ইসি এখন পর্যন্ত এসব হলফনামা প্রকাশ করেনি, যার মাধ্যমে তারা আদালতের নির্দেশও অমান্য করেছে। অথচ নির্বাচন শেষে এসব প্রার্থীরা শপথ গ্রহণ করে সংসদে যোগ দিয়েছেন।

জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের তফসিল ঘোষণা করা হয় ৩ ফেব্রুয়ারি। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ১১ ফেব্রুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ১৬ ফেব্রুয়ারি। ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা ৪ মার্চ। কিন্তু আসনপ্রতি একজন করে প্রার্থী থাকায় ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষে ৪৯ জন নারী প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ঘোষণা করা হয়। বিএনপি সংসদে যোগ না দেওয়ার তাদের জন্য বরাদ্দ থাকা একটি আসনে নির্বাচন হয়নি।

নির্বাচনী আইন অনুযায়ী ৪৯ জন নারী প্রার্থীর হলফনামা ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ইসির ওয়েবসাইটে দেখা যাওয়ার কথা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের পর এক মাস পার হতে চললেও ইসি এই কাজটি করতে পারেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। জেনে বলতে পারব।’