নির্বাচনের ওপর মানুষের আস্থা ফেরানো যাচ্ছে না

এম সাখাওয়াত হোসেন
এম সাখাওয়াত হোসেন

২০১৮-এর নির্বাচনের প্রভাব এর পরের সব নির্বাচনের ওপরে পড়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে যত যা-ই কিছু বলা হোক না কেন, নির্বাচনগুলোতে ভোটারের উপস্থিতি ধারাবাহিকভাবে কমেছে বলে আমরা শুনেছি। এটা হঠাৎ কোনো ঘটনা না।

আর জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে এই নির্বাচনের একটি পার্থক্য হচ্ছে, এখানে শুধু ক্ষমতাসীন দলের জোট নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ফলে এখানে কোনো প্রতিযোগিতা হয়নি। সরকারি দল যাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে, তিনি ৫ শতাংশ ভোট পেলেও জিতবেন, ৫০ শতাংশ ভোট পেলেও জিতবেন। এ ধরনের প্রতিযোগিতার মধ্যে একজন প্রার্থী কেন ভোটে বেশি মনোযোগ দেবেন। তাঁর তো কোনো প্রতিযোগী নেই। ফলে প্রার্থীর কাছেও এই নির্বাচনের গুরুত্ব ছিল কম। দুর্বল ও অনাগ্রহী অনেক প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। নির্বাচন নিয়ে তাঁদের মাথাব্যথা নেই। ৯৬ টির মতো আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। প্রচার-প্রচারণায়ও প্রার্থীদের তেমন সক্রিয় মনে হয়নি। সামগ্রিকভাবে নির্বাচনকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিরুত্তাপ হিসেবে বলা হয়েছে।

নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা কমে আসাটা একটা প্রবণতা হয়ে গেছে। এখান থেকে আমরা বড় কিছু আশা করতে পারব না। এখান থেকে বের হওয়াও কঠিন হয়ে যাবে। আবার এই নির্বাচনের মধ্যেও সিল-ছাপ্পর মারা হয়েছে। আগের রাতে ভোটবাক্স ভরে ফেলার কথা এবারও শোনা যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন থেকে বেশ কিছু ঘটনার কথা স্বীকারও করা হয়েছে। কিন্তু ভোট শেষ হওয়ার পর ফলাফল ঘোষণা হলে স্বীকার করে লাভ কী? জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ ধরনের অভিযোগ ওঠার পর নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এবার তাঁরা ভোট নিয়ে অভিযোগ স্বীকার করে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু এসব কিছু করে নির্বাচনের ওপর মানুষের আস্থা ফেরানো যাচ্ছে না।

এই উপজেলা নির্বাচনটি সেখানেই হচ্ছে, যেখানে কয়েক মাস আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়ে গেছে। স্থানীয় জনগণ তো ওই নির্বাচনটি দেখেছেন। সেখান থেকে তাঁদের একটি অভিজ্ঞতা হয়েছে। ফলে তাঁরা সে অনুযায়ী নির্বাচনে ভোট দিতে গেছেন। অন্যদিক যদি আমরা দেখি যে উপজেলায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতাও তেমন নেই। যদিও উপজেলা একটি প্রশাসনিক ইউনিট। আর সাংসদেরা এখানে সমন্বয় করতে করতে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন। গম বিতরণ থেকে শুরু করে সবকিছুতে সাংসদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যানদের হাতে তেমন কোনো ক্ষমতাই নেই। ফলে নির্বাচিত হয়েও তাঁরা কতটুকু কী করতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ফলে সামগ্রিকভাবে উপজেলা-ব্যবস্থার গুরুত্ব কমে গেছে। সবকিছু মিলিয়ে ভোটার ও প্রার্থী উভয়ের আগ্রহ কমেছে।

এখন স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে না পারলে প্রতিযোগিতামূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও তার প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকবে না।

এম সাখাওয়াত হোসেন: সাবেক নির্বাচন কমিশনার