অর্থ আত্মসাতের মামলা, ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

বাগেরহাট শহরের সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় সাময়িক চাকরিচ্যুত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শেখ মাহফিজুর রহমান বাবুকে (৩৭) কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার দুপুরে দুদকের বিশেষ আদালতের বিচারক জেলা জজ গোলক চন্দ্র বিশ্বাসের আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। বিচারক তা নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বিকেলে তাঁকে বাগেরহাট জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সোনালী ব্যাংকের খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অডিট নিরীক্ষাকালে সোনালী ব্যাংক বাগেরহাট প্রধান শাখার ওই অর্থ আত্মসাতের তথ্য ফাঁস হয়। এরপর ঘটনা তদন্তে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পৃথক দুটি কমিটি গঠন করে। এর মধ্যে ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শেখ মাহফিজুর রহমান বাবু বিদেশে পলাতক থাকা অবস্থায় আত্মসাৎ করা ৩৫ লাখ টাকা ফেরত দেন।

এ ঘটনায় ব্যাংকের কর্মকর্তা ব্যবস্থাপক শেখ মুজিবর রহমান ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শেখ মাহফিজুর রহমান বাবুকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে। ২০১৬ সালের আগস্টে ব্যাংকের আরেক জুনিয়র অফিসার (ক্যাশ) ও সিবিএ নেতা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন খলিফাকেও সাময়িক বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ।

২০১৬ সালের আগস্ট মাসে এ ঘটনায় ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক শেখ মুজিবর রহমান ও জুনিয়র কর্মকর্তা (ক্যাশ) ও সিবিএ নেতা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন খলিফাকে গ্রেপ্তার করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বর্তমানে মামলার অভিযোগপত্রে নাম থাকা ১৫ জনের মধ্যে ১৩ জন জামিনে রয়েছেন। পলাতক রয়েছেন আরও একজন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবী মিলন ব্যানার্জি বিকেলে এই প্রতিবেদককে বলেন, ২০১২ থেকে ১৫ সাল পর্যন্ত বাগেরহাট শহরের রেলরোডে অবস্থিত সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে ব্যবস্থাপক থাকা অবস্থায় শেখ মুজিবর রহমান, জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শেখ মাহফিজুর রহমান বাবু ও আরেক কর্মকর্তা সিবিএ নেতা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন খলিফাসহ অন্তত ১২জন ব্যাংক গ্রাহককে সঙ্গে নিয়ে যোগসাজশে ওই ব্যাংকের ১৫০ জন গ্রাহকের এসওডি (সিকিউর ওভার ড্রাফট) বিপরীতে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে তাদের হিসাব থেকে চার কোটি ৪৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। এই ঘটনায় ২০১৫ সালের ১ অক্টোবর সোনালী ব্যাংকে নতুন যোগদান করা ব্যবস্থাপক খান বাবলুর রহমান বাদী হয়ে ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শেখ মাহফিজুর রহমানের নাম উল্লেখ করে বাগেরহাট মডেল থানায় অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেন। ওই বছরের ২৪ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন মামলাটির তদন্ত শুরু করে। তদন্তে ওই অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা ও ১২ জন গ্রাহকের সংশ্লিষ্টতা পায় দুদক। তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তিন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের ২ নম্বর দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। অভিযুক্ত ১৫ জনের মধ্যে ১৩ জন বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। পলাতক রয়েছেন আরও একজন।