'নির্বাচনের বাংলাদেশি স্টাইল' নিয়ে চিন্তিত শিক্ষার্থীরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের অনেকে বলেছেন, নির্বাচনের একটা বাংলাদেশি স্টাইল দাঁড়িয়ে গেছে। ডাকসু নির্বাচনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যা ঘটেছে, তা স্টাইল মতোই হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা করেছিলেন। তাঁদের আশা ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আর প্রার্থী উভয় সচেতন। ব্যালট বাক্স আগেই ভরে ফেলা কিংবা কৃত্রিম ভোটারের লাইন তৈরি করে ভোট দিতে বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তখন শিক্ষার্থীরা এই প্রতিক্রিয়া জানান।
বিশ্ববিদ্যালয় তখন অনেকটাই ফাঁকা। খুব অল্প শিক্ষার্থীকেই পাওয়া গেল ক্যাম্পাসে। তিনজন শিক্ষার্থী মনে করেন, ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য ছাত্রনেতাদের মাঠ ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। শেষ পর্যন্ত দেখা দরকার ছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের ছাত্র আতিক চৌধুরী বলছিলেন, ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হলে কয়েকটি জিনিস ঘটত। যেমন হলে কোনো দলের একক আধিপত্য থাকত না। হলে সিট বরাদ্দ পাওয়া থেকে শুরু করে নিত্যকার যেসব সংকট সেগুলোর মোকাবিলা সহজ হতো। বিভাগে লেখাপড়া ও অন্যান্য কার্যক্রম গতি পেত এবং কেন্দ্রীয়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব সিদ্ধান্ত হয় সেখানে শিক্ষার্থীদের মতামত প্রতিফলিত হতো।
আতিক চৌধুরী বলেন, ‘এখন শিক্ষার্থীরা যতটা খারাপ আছে, তার চেয়ে খারাপ আর কিছু হতে পারে না। ক্যালকুলেটরের জন্য চোখ হারানো, বারান্দায় থেকে শীতে মৃত্যু হওয়ার মতো ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকার আশঙ্কা থাকবে।’
সমাজকল্যাণ বিভাগের শিক্ষার্থী তবিবুর রহমান ডাকসু নির্বাচন চেয়েছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ছাত্র হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর কোনো মূল্যায়ন নেই। নির্বাচন হলে ছাত্ররা সব ছাত্রসংগঠনের কাছে মূল্যায়িত হতেন।
নেসারউদ্দীন নামে অপর একজন শিক্ষার্থী বলেন, ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও কতটা কী হতো, সেটা নিয়ে তিনি সংশয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, তাঁর বোধবুদ্ধি হওয়ার পর থেকে তিনি এমন নির্বাচনই দেখে এসেছেন। বিকাশ এবং বৃদ্ধির সময় তাঁরা যে ‘বাংলাদেশ স্টাইলের’ নির্বাচন দেখেছেন তার প্রভাব পরবর্তী সমেয় কী হবে, সেটা নিয়ে তিনি চিন্তিত।
জীববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, যা ঘটল সেটা অপ্রত্যাশিত। তাঁরা চাননি এভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন হোক। উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ছাত্র রবিউল হোসেন বলেছেন, তিনি খুবই ব্যথিত। গণতন্ত্রের শুরু যেখানে, সেখানে গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে মত দেন তিনি।
শিক্ষার্থীরা মনে করেন, ডাকসু নির্বাচন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকেরা ভাবমূর্তি উদ্ধার করতে পারতেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনসহ বেশ কিছু ঘটনায় যা তাঁরা খুইয়েছেন।