'চিহ্ন'-এর চিরায়ত বাংলা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চিহ্নমেলায় তরুণ সাহিত্যিকদের স্টলে বই দেখছেন দর্শনার্থীরা।  গতকাল সন্ধ্যায় মেলা চত্বরে।  ছবি: প্রথম আলো
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চিহ্নমেলায় তরুণ সাহিত্যিকদের স্টলে বই দেখছেন দর্শনার্থীরা। গতকাল সন্ধ্যায় মেলা চত্বরে। ছবি: প্রথম আলো

আমগাছগুলোতে ঝুলছে সুতোয় বাঁধা বিভিন্ন বাংলা বর্ণ। চত্বরজুড়ে দড়িতে লাগানো হয়েছে ছোট ছোট রঙিন কাগজ। প্রবেশপথে আঁকা হয়েছে আলপনা। সব মিলিয়ে মেলার আয়োজনে তৈরি হয়েছে চিরায়ত বাংলার আবহ। সাহিত্যের ছোটকাগজ চিহ্নর উদ্যোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে দুই বাংলার কবি, সাহিত্যিক, লিটলম্যাগ কর্মী, পাঠক, সম্পাদকদের এই সম্মিলন ঘটে। দুই দিনব্যাপী চলা এ মেলা গতকাল মঙ্গলবার শেষ হয়েছে।

ছোটকাগজ চিহ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থবারের মতো এই মেলার আয়োজন করেছে। এবারের মেলায় ১৩০টির বেশি লিটলম্যাগসহ দেড় শতাধিক স্টল ঠাঁই পায়। উদ্বোধনের পর থেকেই দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেছিল স্টলগুলোয়। ‘বিবর্তনের আলোয় সংগ্রহের ইতিহাস’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে ছিল রীতিমতো উপচে পড়া ভিড়। প্রাচীন স্ট্যাম্প, ট্রামের টিকিট, ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের অটোগ্রাফ, চিঠি, কলকাতার সংবাদপত্রে মুক্তিযুদ্ধের খবরের ‘কাটিং’সহ আরও নানা সংগ্রহ ছিল এই আয়োজনে।

গতকাল সকালে কবিতাপাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় শেষ দিনের আয়োজন। সারা দিন ধরে চলে নানা ঢঙের সাহিত্য আড্ডাসহ আলোচনা। বিকেলে বসন্তের কবিতা পাঠ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবৃত্তি সংগঠন ‘স্বনন’। সন্ধ্যায় আটটি ছোটকাগজ ও এর সম্পাদককে ‘চিহ্ন’ সম্মাননা দেওয়া হয়। এ ছাড়া চিহ্নমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিটি ছোটকাগজকে ‘চিহ্ন’ স্মারক দেওয়া হয়। সন্ধ্যায় সংগীত পরিবেশন করে কলকাতার গানের দল ‘মন ভাষা’।

মেলার উদ্বোধক কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলেন, ‘আমাদের আমন্ত্রণে দেবেশ রায় এখানে এসেছেন। পশ্চিম বাংলাসহ বাংলাদেশের নানা প্রান্ত থেকে অনেকেই এখানে এসেছেন। তাই চিহ্নমেলার এই আয়োজন যেন হয়ে উঠেছে সত্যিকারের মিলনমেলা।’

সাহিত্যিক দেবেশ রায় বলেন, ‘আজকে এই সম্মেলন হচ্ছে এক সার্বভৌম বাংলাদেশে, যাঁরা সমস্ত পৃথিবীকে চেনাচ্ছে মাতৃভাষাই মানুষের প্রাণের ভাষা। মাতৃস্তন্যের সঙ্গে, জীবনের প্রথম কান্নার সঙ্গে এই ভাষা জড়িত। আমরা সেই গর্বিত বাংলাভাষী। আমরা এক বিজয়ী সৈনিক। বিনয়ের সঙ্গে এই মেলায় এসেছি আপনাদের সবাইকে অভিনন্দন জানাতে।’

গত সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় শহীদুল্লাহ কলাভবনের সামনের চত্বরে জাতীয় পতাকা, বিশ্ববিদ্যালয় ও চিহ্নের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে চিহ্নমেলা উদ্বোধন করা হয়। সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত শেষে মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য এম আবদুস সোবহান, সহ-উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা ও চৌধুরী মো. জাকারিয়া, চিহ্ন সম্পাদক শহীদ ইকবাল, ছাত্র উপদেষ্টা লায়লা আরজুমান বানু, প্রক্টর লুৎফর রহমান প্রমুখ।

এবারের চিহ্নমেলায় বাংলাদেশের ৯৪টি লিটলম্যাগ ও ভারতের ৩০টি লিটলম্যাগ থেকে প্রায় ২০০ সম্পাদক, কর্মী যোগ দেন।