গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব 'অবৈধ'

>

• গ্যাসের দাম বাড়াতে তিতাসের প্রস্তাব
• এক চুলা ৭৫০ থেকে ১,৩৫০ টাকা
• দুই চুলা ৮০০ থেকে ১,৪৪০ টাকা
• প্রস্তাবকে অবৈধ বলছেন বিশেষজ্ঞরা

রান্নাঘরে যাঁদের গ্যাসের চুলা একটি, তাঁরা এখন মাসে বিল দেন ৭৫০ টাকা। তিতাস গ্যাস কোম্পানি তা ১ হাজার ৩৫০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে। একইভাবে দুই চুলার জন্য তিতাস প্রস্তাব করেছে ১ হাজার ৪৪০ টাকা। অথচ এখন দিতে হয় ৮০০ টাকা। আবাসিকের গ্যাসসহ সব ধরনের গ্যাসের দাম গড়ে ১০২.৮৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে লাভে থাকা এই কোম্পানি। এই প্রস্তাবকে অবৈধ বলছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা।

জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তিতাস, বাখরাবাদ, কর্ণফুলীসহ ছয়টি বিতরণ কোম্পানি এই সংস্থার কাছেই দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। বিইআরসির আইন অনুযায়ী, তাদের কাছে বছরে একবারের বেশি গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে পারে না কোম্পানিগুলো। গত বছরের অক্টোবরে সংস্থাটি গ্যাসের দাম বাড়িয়েছিল, তবে ওই দাম গ্রাহককে দিতে হয়নি। সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব অনুযায়ী বাড়তি দাম (এক বছরের জন্য সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা) সরকার দিয়েছে।

গ্যাসের দাম বাড়ানোর আগে গণশুনানি করে বিইআরসি। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবির মিলনায়তনে গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এই গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন নাগরিকদের বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। তাঁরা গণশুনানিকে ‘বেআইনি’ উল্লেখ করে অবিলম্বে তা বন্ধের দাবি জানান।

গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে শিল্পকারখানায় মজুরি ও অন্যান্য ব্যয় বেড়েছে। এতে আগের চেয়ে উদ্যোক্তাদের খরচ ২৯ শতাংশ বেড়েছে। এখন আবার গ্যাসের দাম বাড়ালে উদ্যোক্তারা দেউলিয়া হয়ে যাবে।

গণশুনানিতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি আবাসিকের পাশাপাশি যানবাহনে ব্যবহৃত সিএনজির (সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাস) দাম প্রতি ইউনিট (প্রতি ঘনমিটার) ৩২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৮.১০ টাকা, শিল্পকারখানার বিদ্যুৎকেন্দ্রে (ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্র) সরবরাহ করা গ্যাস (প্রতি ইউনিট ৯ টাকা ৬২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৮ টাকা ৪ পয়সা) এবং সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার করা গ্যাসের দাম (প্রতি ইউনিট ৩ টাকা ১৬ পয়সা থেকে ৯ টাকা ৭৪ পয়সা) বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে তিতাস।

গণশুনানিতে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, এক অর্থবছরে গ্যাসের মূল্য একবারের বেশি বৃদ্ধি করা যায় না, এটি বিইআরসির আইনেই বলা আছে। এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানির কথা বলে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির যে প্রস্তাব বিতরণ কোম্পানিগুলো দিয়েছে তা অবৈধ। এর কারণ, এলএনজি আপ–স্ট্রিম (উৎস) গ্যাস। এর মূল্য নির্ধারণ কররে সরকারের জ্বালানি বিভাগ। এটি এখনো তারা করেনি। পেট্রোবাংলা বিতরণ কোম্পানিগুলোকে এলএনজির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, যার ভিত্তিতে তারা মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে, যা অবৈধ। এটি করে সরকারকে মানুষের সামনে তারা হেয় করেছে।

গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য আবদুল আজিজ, মিজানুর রহমান, রহমান মুরশেদ, মাহমুদউল হক ভূঁইয়া। তাঁরা শামসুল আলমের বক্তব্যের কোনো জবাব দেননি।

অবশ্য তিতাস গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্বে) হারুন উর রশীদ শুনানিতে স্বীকার করেন, উৎসে গ্যাসের মূল্য পেট্রোবাংলা ঠিক করে তাদের কাছে পাঠিয়েছে।

তিতাস লাভে থেকেও কেন গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে, তা নিয়ে শুনানিতে প্রশ্ন তোলেন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। এ ছাড়া শুনানিতে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।

এদিকে বিকেলে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর পৃথক গণশুনানি হয়।

এই গণশুনানি ‘অবৈধ’ কি না জানতে চাইলে বিইআরসির সদস্য আবদুল আজিজ খান গতকাল রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কমিশনে একটা প্রস্তাব এসেছে, সেই প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি হচ্ছে। যদি আদালত গণশুনানি বন্ধ করতে নির্দেশ দেন, তাহলে গণশুনানি বন্ধ করে দেওয়া হবে।