'হ্যালো...ভিসি শুনতে পাচ্ছেন কি?'

রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থী। ছবি : আবদুস সালাম
রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনশন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থী। ছবি : আবদুস সালাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ডাকসুর পুনঃ তফসিল ও নতুন করে নির্বাচনের দাবিতে দ্বিতীয় দিনেও অনশন করছেন শিক্ষার্থীরা। অসুস্থ হয়ে একজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। নতুন করে যোগ দিয়েছেন আরও তিনজন। সেখানেই অনশনের সমর্থনে অঞ্জন দত্তের ‘বেলাবোস’ শিরোনামে গানের সুরে শিক্ষার্থীরা গাইছেন, ‘হ্যালো, এটা কি টু ফোর ফোর ওয়ান ওয়ান থ্রি নাইন, ভিসি স্যার আপনি শুনতে পাচ্ছেন কি...?’

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে অনশনে বসেন চার শিক্ষার্থী। পরে যোগ দেন তাঁদের সঙ্গে আরও দুজন। রাত ১২টার দিকে রনি হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী অনশন ছেড়ে চলে যান। আর রাত দুইটার দিকে নতুন করে অনশনে যোগ দেন ভূতত্ত্ব বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাহা আল মাহমুদ। রাতে ছয় অনশনকারীদের ঘুমানোর জন্য কাঁথা ও কম্বল এনে দেন সহপাঠীরা। বুধবার বেলা তিনটার দিকে অনশনরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন অনিন্দ্য মণ্ডল। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে।

বুধবার দুপুরের পর অনশনকারীদের সঙ্গে যোগ দেন আরও দুজন। তাঁরা হলেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের স্নাতকোত্তরের মিম আরাফাত ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের রবিউল ইসলাম। রবিউল দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও ডাকসু নির্বাচনে সমাজসেবা পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। আর আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে নির্বাচনে অংশ নেন মিম আরাফাত মানব।

সন্ধ্যায় রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে দেখা যায়, পাটিতে বসে বই পড়ছেন সাত অনশনকারী। আশপাশে ভিড় করে বসে আছেন সমর্থনকারীরা। গরমের কারনে পাখা দিয়ে পালাক্রমে অনশনকারীদের বাতাস করছেন তাঁরা। পাশেই অনশনের সমর্থনে বসে গান গাইতে দেখা গেল কয়েকজনকে। অঞ্জন দত্তের ‘বেলাবোস’ শিরোনামের গানের সুরে গাইছেন, ‘হ্যালো, এটা কি টু ফোর ফোর ওয়ান ওয়ান থ্রি নাইন, ভিসি আপনি শুনতে পাচ্ছেন কি...।’ বাউলশিল্পী শাহ আলম সরকারের ‘দিল না’ গানের সুরে গাইছেন, ‘দিল না দিল না/ ভিসি ডাকসু দিল না/ এত যে নিঠুর ডাকসু জানা ছিল না।’ প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘সেলুকাস এই শিক্ষকদের কাছেই শুনতে হয় নীতিবাক্য।’

অনশনকারী মিম আরাফাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের রড, হাতুড়ি, সরকারের মদদ নাই। দাবি পূরণেরও সম্ভাবনা নাই। তারপরেও অনশন করে যাব। ডাকসুর ভোট কারচুপি হয়, শিক্ষকেরা সহায়তা দেন। আমরা আন্দোলন করেও এর সমাধান পাই না। এটা আমাদের ব্যর্থতা। সে ব্যর্থতা নিয়ে বাঁচার চাইতে মরে যাওয়াই ভালো।’

মঙ্গলবার থেকে অনশন করছেন ডাকসুর ভোটার রাফিয়া তামান্না। তিনি বলেন, ‘ভোট চুরিতে সহায়তা করে শিক্ষকেরাই বলছেন ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। তাঁরা যদি এমন মিথ্যা বলেন, তাহলে সম্মান দেখানোর আর জায়গা থাকে না।’

আন্দোলনের প্রতিবাদে অবস্থান
অনশনকারীদের পাশেই রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশের সিঁড়িতে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে করা আন্দোলনের প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন আট শিক্ষার্থী। প্ল্যাকার্ডে তাঁরা নিজেদের পরিচয় লিখেছেন, ‘ছাত্রলীগ কর্মী ও ভোটার।’ অবস্থানকারী সবাই স্যার এ এফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তাঁরা বলছেন, এ এফ রহমান হলে ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী ছিলেন তিনজন। ১৩টি পদের হল সংসদ নির্বাচনে তাঁরা (বাম জোট) কীভাবে জয় আশা করেন। অবস্থানকারীদের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ চাই, আপনাদের ভণ্ডামির নাটক বন্ধ করুন।’

রাসেল মিয়া নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘নির্বাচনের দিন দুপুরেই ছাত্রলীগ ছাড়া বাকিরা ভোট বর্জন করে। রাতে ফল ঘোষণার পর তাঁদের দুই প্রার্থী জিতলে ওই দুই পদের ফল মেনে নেয়। এটা হাস্যকর। ভণ্ডামি। এই ভণ্ডামির মানসিকতা নিয়ে বর্জনকারীরা আবার আন্দোলন করছেন। এমন ভণ্ড আন্দোলনের প্রতিবাদে আমাদের এ অবস্থান কর্মসূচি।’বেলা একটা থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচি শেষ হয় রাত আটটায়।