সড়ক ফুঁড়ে অবিরত পানি বের হচ্ছেই

ওয়াসার পাইপলাইন ফুটো হয়ে সড়কে ছড়িয়ে পড়েছে পানি। গতকাল বেলা দুইটায় নগরের বহদ্দারহাট মোড়ে।  জুয়েল শীল
ওয়াসার পাইপলাইন ফুটো হয়ে সড়কে ছড়িয়ে পড়েছে পানি। গতকাল বেলা দুইটায় নগরের বহদ্দারহাট মোড়ে। জুয়েল শীল

চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি অপচয় নিয়ে প্রয়াত ছড়াকার নূর মোহাম্মদ রফিক লিখেছিলেন ‘...ঘুমত রইয়ে পানির মালিক ওয়াসা, এই পানি লই খেলা খাদ্ দে পোয়া–ছা’। এই ছড়ার বাস্তবতা আরও একবার দেখা গেল নগরের বহদ্দারহাট এলাকায়। বেশ কিছুদিন ধরে সেখানে চট্টগ্রাম ওয়াসার পাইপলাইন ফুটো হয়ে সড়ক ফুঁড়ে বের হচ্ছে পানি। ৬ মার্চ বিকেলে সড়কের ওপর জমে থাকা সেই পানিতে শিশুদের খেলায় মেতে উঠতে দেখা যায়।

এর এক সপ্তাহ পর গতকাল বুধবারও দেখা গেছে আগের দৃশ্য। বহদ্দারহাট মোড় থেকে হাজী চাঁন মিয়া সড়কের প্রবেশপথের দুই জায়গায় সড়ক ফুঁড়ে এ পানি বের হচ্ছে। সে পানি ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের ২০ গজ জায়গাজুড়ে। পানি জমে থাকায় গাড়ি চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। লোকজনের হাঁটাচলায়ও সমস্যা হচ্ছে। তিন সপ্তাহ ধরে এভাবে পানি অপচয় হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।

এই পথ দিয়ে হেঁটে চলা লোকজন বলাবলি করছিল এই বলে—এর ফলে একদিকে যেমন পানির অপচয় হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে ময়লা পানি ছিদ্রের মাধ্যমে প্রবেশ করে মিশে গ্রাহকদের স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়াতে পারে।

পাইপলাইন ছিদ্র হয়ে কত দিন ধরে পানি বের হচ্ছে—এমন প্রশ্নে স্থানীয়রা কেউ স্পষ্টভাবে কিছু বলতে পারেননি। এই সড়ক দিয়ে নিয়মিত রিকশা চালান জাফর আলম ও শহীদ উদ্দিন। তাঁরা গতকাল বলেন, তিন সপ্তাহ ধরে পানি বের হতে দেখছেন। তবে ওই এলাকায় ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিন বলেন, প্রায় সময় সড়ক ফুঁড়ে পানি বের হতে দেখেন তাঁরা। এখন একটু বেশি পানি বের হচ্ছে।

হাজী চাঁন মিয়া সড়কের কালারপুল এলাকার বাসিন্দা আবদুল মজিদ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এই লাইন দিয়ে তাঁদের এলাকায়ও ওয়াসার পানি যায়। ছিদ্র হয়ে যাওয়া পাইপলাইন দিয়ে নালা-নর্দমার পানি প্রবেশ করছে। তাঁরা নিয়মিত ওয়াসার পানি ব্যবহার করেন।

 ওয়াসার (মড-২) নির্বাহী প্রকৌশলী সজীব বড়ুয়া প্রথম আলোকে ৬ মার্চ বলেন, পাইপলাইন ছিদ্র হয়ে পানি বের হচ্ছে হয়তো। পাইপলাইন দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। কিন্তু এর এক সপ্তাহ পর গতকালও সেই ফুটো সংস্কার করা হলো না।

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রতি মাসের উৎপাদন থেকে গড়ে এক চতুর্থাংশ পানি অপচয় হয়। এ অপচয়কে রাজস্ববহির্ভূত পানি (সিস্টেম লস) হিসাবে দেখায় সংস্থাটি। সিস্টেম লসের তিনটি অন্যতম কারণের মধ্যে একটি হলো পাইপলাইন ছিদ্র হয়ে পানি অপচয় হওয়া।

শুধু বহদ্দারহাট নয়, নগরের বিভিন্ন এলাকায় পাইপলাইন ছিদ্র হয়ে প্রায় সময় পানি বের হয় বলে জানান ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। তিনি বলেন, পানির অপচয় রোধে ওয়াসা দ্রুত কোনো উদ্যোগ নেয় না। উল্টো প্রতিবছর পানির দাম বাড়ায়। অপচয় রোধ করা গেলে পানির দাম বাড়াতে হতো না।