আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সাংসদ রণজিতের প্রচার

কর্মিসভায় বক্তব্য দিচ্ছেন সাংসদ রণজিৎ কুমার। গতকাল বাঘারপাড়া পাইলট উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ে মাঠে।  প্রথম আলো
কর্মিসভায় বক্তব্য দিচ্ছেন সাংসদ রণজিৎ কুমার। গতকাল বাঘারপাড়া পাইলট উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ে মাঠে। প্রথম আলো

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর ও সদরের বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনের সাংসদ রণজিৎ কুমার রায়। গতকাল বুধবার দুপুরে বাঘারপাড়া পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী হাসান আলীর পক্ষে নির্বাচনী কর্মিসভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।

এ বিষয়ে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নাজমুল ইসলাম কাজল জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

নাজমুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী কোনো সাংসদ কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু রণজিৎ কুমার রায় এ বিধি ভঙ্গ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাসান আলীর পক্ষে নিয়মিত সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন। সব সভা–সমাবেশে সাংসদের বক্তব্য উসকানিমূলক। নৌকা প্রতীকের বাইরে অন্য কোনো প্রার্থীকে তিনি ভোটের মাঠে নামতে দেবেন না বলে হুমকি দিচ্ছেন। এতে সাধারণ ভোটার ও প্রার্থীরা আতঙ্কিত। এ বিষয়ে দুই দফায় জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুসাইন শওকত বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘আচরণবিধি অনুযায়ী কোনো সাংসদ কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে নামতে পারবেন না। সাংসদ রণজিৎ কুমার রায় আওয়ামী লীগের এক প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নেমেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।’

বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে নির্বাচনী কর্মিসভা

গতকাল দুপুরে বাঘারপাড়া পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী হাসান আলীর নির্বাচনী কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে এ কর্মিসভা করা হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাংসদ রণজিৎ কুমার রায়। বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে মাঠে নির্বাচনী কর্মিসভা করায় মানুষের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সময়সূচি সকাল নয়টা থেকে বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত। সকালে বিদ্যালয়ের মাঠে ছাত্রদের জাতীয় সংগীতের দৈনিক সমাবেশ শেষে যথারীতি পাঠদান শুরু হয়। বেলা সাড়ে এগারোটার পর বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিদ্যালয়ের মাঠে জড়ো হতে থাকেন। দুপুর ১২টার দিকে বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করা হয়। ছুটির পরে মাঠে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কর্মিসভা চলতে থাকে।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন রণজিৎ কুমার। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু বকর শিকদার, হরিপদ রায়, যুগ্ম সম্পাদক অরুণ কুমার অধিকারী, আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী হাসান আলী প্রমুখ। নির্ধারিত সময়ের আগে বিদ্যালয় ছুটির বিষয়ে প্রধান শিক্ষক নব কুমার সাহা বলেন, ‘সাংসদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আমরা বিদ্যালয় বেলা দেড়টায় ছুটি দিয়েছি।’

সভায় যোগ দেওয়া বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক কাজ ফেলে কর্মিসভায় যোগ দিতে হয়েছে। সভাটি বিকেলে করলেও হতো। তাহলে বিদ্যালয় ছুটি দেওয়ার দরকার হতো না।’

এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান প্রার্থী হাসান আলী বলেন, নির্বাচনী কর্মী সমাবেশে বিভিন্ন ইউনিয়নের ৩০৪ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। সাংসদ ছিলেন প্রধান অতিথি। বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে কর্মিসভার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কেন কীভাবে বিদ্যালয় ছুটি দেওয়া হয়েছে, তা আমার জানা নেই।’

ফোন বন্ধ পাওয়ায় এ বিষয়ে সাংসদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।