কিডনি রোগের প্রকোপ বাড়ছে

>

• দেশে কিডনি রোগীর গ্রহণযোগ্য পরিসংখ্যান নেই
• আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দুই কোটি হতে পারে
• বহু মানুষ কিডনি রোগের সেবা পাচ্ছেন না
• আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব কিডনি দিবস

দেশে কিডনি রোগের প্রকোপ বাড়ছে। আক্রান্ত রোগীর তুলনায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সেবাকেন্দ্রের সংখ্যা কম। চিকিৎসা ব্যয় বেশি হওয়ায় অনেকেই মধ্যপথে চিকিৎসা বন্ধ করে দিচ্ছে। অনেকে বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য বিদেশেও যাচ্ছে।

তবে দেশে কত মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত, তার নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান কারও কাছে নেই। তবে কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞরা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সংগঠন বলছে, কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সহ-উপাচার্য ও কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞদের সংগঠন বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মুহম্মদ রফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিডনি রোগের জাতীয়ভাবে জরিপের তথ্য নেই। বছর দশেক আগে সাভারের চাকুলিয়া গ্রামে একটি জরিপে দেখা গিয়েছিল, ১৬ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। সেই পরিপ্রেক্ষিতে দুই কোটির হিসাবটি বলা হয়।’

কিডনি রোগে বছরে কত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, তার পরিসংখ্যান পাওয়া যায় ব্রিটিশ চিকিৎসা সাময়িকীর এক প্রবন্ধে। ২০১৮ সালে অক্টোবরে প্রকাশিত ওই প্রবন্ধে বলা হয়েছিল, কিডনি ক্যানসার ও বিভিন্ন ধরনের দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে বাংলাদেশে ২০১৬ সালে ১৯ হাজার ৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ২০৪০ সালে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৪৪ হাজার ২৫০ হবে।

বিশিষ্ট কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ও কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক হারুন আর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, দেশের কিডনি রোগীরা দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে আছে। চিকিৎসাকেন্দ্র ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাড়ানোর এখনই উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

পরিসংখ্যানে পরিস্থিতি
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ৫০ হাজার জনগোষ্ঠীর জন্য একজন নেফ্রোলজিস্ট থাকা দরকার। দেশ নেফ্রোলজিস্ট আছে মাত্র ১৭০ জন। দেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ধরা হলে ১০ লাখ মানুষের জন্য একজন করে নেফ্রোলজিস্ট আছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনিতে প্রদাহ ও আরও কিছু কারণে মানুষ দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে চিকিৎসা হিসেবে ডায়ালাইসিস ও কিডনি প্রতিস্থাপনকেই প্রধান বিকল্প হিসেবে বেছে নেন চিকিৎসকেরা। অধ্যাপক হারুন বলছেন, ডায়ালাইসিস দরকার, এমন রোগীর তালিকায় প্রতিবছর আনুমানিক ৩৫ হাজার মানুষ যুক্ত হয়।

কিন্তু দেশে ডায়ালাইসিসের সুযোগ খুব কম মানুষ পায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১১ মার্চ প্রথম আলোকে যে তালিকা দিয়েছে, তাতে দেখা যায়, দেশে সরকারি-বেসরকারি ৪৩টি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের ডায়ালাইসিস শয্যা আছে ৫৭০টি। বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশন বলছে, প্রতিষ্ঠান ও শয্যার সংখ্যা এর দ্বিগুণের কিছু বেশি।

বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মুহম্মদ রফিকুল আলম বলেছেন, দেশে ২৫ হাজার মানুষ ডায়ালাইসিস করতে পারে। প্রতিবছর এর জন্য খরচ হয় দু-তিন লাখ টাকা। ব্যয় বেশি হওয়ায় দেশের ৯০ শতাংশ রোগী ডায়ালাইসিস করাতে পারে না। ডায়ালাইসিস শুরুর এক বছরের মধ্যে ৭০ শতাংশ রোগী তা ছেড়ে দেয়।

ডায়ালাইসিস একবার শুরু করলে আজীবন তা অব্যাহত রাখতে হয়। ডায়ালাইসিসের বিকল্প হচ্ছে কিডনি প্রতিস্থাপন। কিডনিবিষয়ক আলোচনায় সাম্প্রতিক সময়ে কিডনি প্রতিস্থাপনের বিষয়টি সামনে চলে আসছে। ১৯৮২ সালে দেশে প্রথম কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় বিএসএমএমইউতে (তৎকালীন পিজি হাসপাতালে)। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বিএসএমএমইউ এ পর্যন্ত ৫৭০টি কিডনি প্রতিস্থাপন করেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি প্রতিষ্ঠান প্রতিস্থাপন করেছে যথাক্রমে ৫টি ও ৩৯ টি।

এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশি প্রতিস্থাপন করেছে রাজধানীর শ্যামলী এলাকার বেসরকারি সিকেডি ও ইউরোলজি হাসপাতাল। এ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি ৮টি প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ৮৯৯টি কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য চিকিৎসাকেন্দ্র ও চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন অধ্যাপক হারুন আর রশিদ।

আজ কিডনি দিবস
আজ বিশ্ব কিডনি দিবস। প্রতিবছর মার্চ মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার এ দিনটি পালন করা হয়। দিনটির এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘সুস্থ কিডনি সবার জন্য, সর্বত্র’।

দিনটি উপলক্ষে ল্যাবএইড হাসপাতাল গতকাল বুধবার একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে। ইউনাইটেড হাসপাতাল আজ দুপুরে একটি সেমিনারের আয়োজন করেছে।