প্রকাশ্যে কৃষিজমি ও খালের মাটি লুট

প্রকাশ্যে কৃষিজমি ও খালের মাটি লুট
প্রকাশ্যে কৃষিজমি ও খালের মাটি লুট

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের লাধুরচর এলাকায় কৃষকদের ফসলি জমি ও সরকারি খালের মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্য ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় কৃষকেরা জেলা প্রশাসক ও ইউএনও বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন।
লাধুরচর গ্রামের কৃষক খালেক মাস্টার, আজগর আলী, আবদুর রহিম ও রাসেল মিয়া অভিযোগ করেন, কোনো রকম অনুমতি ছাড়াই লাধুরচরের কৃষকদের জমির মাটি খননযন্ত্র দিয়ে কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। মাটি লুটের ঘটনায় জড়িত নোয়াগাঁও ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ার হোসেন ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ইতিমধ্যে কয়েকজন কৃষককে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকেরা।
নোয়াগাঁও ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সেলিম মিয়া বলেন, ‘প্রকাশ্যে দিনদুপুরে এভাবে মাটি–সন্ত্রাসের ঘটনা আমার জীবনে দেখিনি। যেহেতু কৃষকেরা আমার পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ডের বাসিন্দা, তাই তাঁরা প্রতিদিনই আমার কাছে এসে কান্নাকাটি করেন। কৃষকদের কান্না দেখে আমার খুব খারাপ লাগে। আমি বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও থানা-পুলিশকে অবগত করলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।’

গত মঙ্গলবার সকালে লাধুরচরে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৫০টি ট্রাক কৃষকদের বোরো ধানের জমির ওপর দিয়ে চলাচল করছে। সরকারি খাল ও খালপাড়ের কৃষকদের জমির মাটি জোরপূর্বক কেটে এসব ট্রাকে বিভিন্ন ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকেরা যাতে মাটি কাটায় বাধা দেওয়ার সাহস না পান, সে জন্য একটি পক্ষ লাঠি, রামদা নিয়ে ঘটনাস্থল পাহারা দিচ্ছে। গণমাধ্যমকর্মীদের ছবি তুলতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘লাধুরচর এলাকার খাল ও কৃষকদের জমির ওপর দিয়ে সড়ক বানিয়ে ট্রাকে মাটি নেওয়ার অনুমতি জেলা প্রশাসন দেয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে এবং অবৈধ মাটি কাটা বন্ধ করতে আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে ওই এলাকায় মাটি লুট চলছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা সরকারি খালের মাটি কেটে বিক্রি করছি—এ কথা সত্য; তবে এতে কৃষকের জমি হয়তো কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খাল খনন হলে কৃষকেরাই বেশি উপকৃত হবেন।’ খাল খননে সরকারি অনুমতি আছে কি না, সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ইউএনও অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হয়েছি। অবৈধভাবে মাটি কাটা হলে অবশ্যই দু-এক দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’