দিনটির আকর্ষণ ছিল হাইকিং, তাঁবু জলসা

গাজীপুরের মৌচাকে দুঃসাহসিক অভিযানে স্কাউটরা। গতকাল সকালে।  ছবি: প্রথম আলো
গাজীপুরের মৌচাকে দুঃসাহসিক অভিযানে স্কাউটরা। গতকাল সকালে। ছবি: প্রথম আলো

তাজউদ্দীন আহমদ ভিলেজের সামনে বড় গেট। এতে তাঁর ছবি ও জীবনবৃত্তান্ত দেওয়া। মনোযোগ দিয়ে তা পড়ছে টাঙ্গাইলের মধুপুরের আলোকদিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র মো. নূর আলম।
নূর আলম বলে, ‘আমি জাম্বুরি করতে এই প্রথম গাজীপুরে এসেছি। এখানে এসে জানতে পারি, তাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং তিনি এই গাজীপুরের সন্তান। জাম্বুরিতে এসে মুক্তিযুদ্ধসহ নানা অজানা বিষয়ে জানতে পেরেছি, শিখতে পেরেছি।’
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাকে সপ্তাহব্যাপী দশম বাংলাদেশ ও তৃতীয় সানসো স্কাউট জাম্বুরির গতকাল বুধবার ছিল ষষ্ঠ দিন। অংশগ্রহণকারীরা গতকাল সকাল থেকে হাইকিংয়ে অংশ নেয় বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে। তাদের সঙ্গে ছিল দিকনির্দেশনামূলক বার্তা ফিল্ড বুক, কম্পাস, ফার্স্ট এইড বক্স, নিরাপত্তামূলক সরঞ্জামাদি। স্কাউটরা গহিন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে, কখনো জলাশয় পেরিয়ে, আবার কখনো দুর্গম পাহাড়ি পথে সাংকেতিক চিহ্ন অনুসরণ করে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করে।
রোমাঞ্চকর এই চ্যালেঞ্জের স্কাউটরা উপস্থিত বুদ্ধি, কৌশল ও সাহসের সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম ও পরীক্ষায় অংশ নেয়। হাইকিংয়ে ইউনিটভিত্তিক অংশগ্রহণের জন্য ট্র্যাকিং সাইন (অনুসরণ চিহ্ন) এবং কম্পাস ব্যবহারের ওপর স্কাউটরা যথেষ্ট অনুশীলন করে আসে। তারা কোড সাইফার, ফিল্ড বুক ও কম্পাসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। দিনব্যাপী এই চ্যালেঞ্জে স্কাউটরা বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করে গন্তব্যে পৌঁছে হাঁড়ি-পাতিল ছাড়াই রান্না সম্পন্ন করে এবং দুপুরের খাবার খায়। হাইকিংকে আকর্ষণীয় করার জন্য প্রতিযোগিতামূলক বেশ কয়েকটি ইভেন্ট রাখা হয়। বেশ কয়েকটি প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী স্কাউটরা হাইকিং উপভোগ করে।
জাম্বুরির অন্যতম আকর্ষণ তাঁবু জলসা অনুষ্ঠিত হয় গতকাল। এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তাঁবু জলসা হচ্ছে চিত্তবিনোদনের জন্য স্কাউটদের নিজস্ব অনুষ্ঠান। যেখানে স্কাউটরা খোলা মাঠে আগুন জ্বালিয়ে তার চারপাশে বসে গানবাজনা, নৃত্য ও নাটিকা পরিবেশন ও উপভোগ করে।
১১ হাজার শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে পুরো জাম্বুরি ক্যাম্পের বিস্তীর্ণ শালবনে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রকাশ। এবার জাম্বুরির মূল অ্যারেনার নামকরণ হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। বেশির ভাগ অনুষ্ঠানই হচ্ছে এই অ্যারেনাতে। জাম্বুরিতে চারটি ভিলেজ রয়েছে। এগুলোর নামকরণ হয়েছে জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানের নামে। আবার প্রতিটি ভিলেজের অধীনে ১২টি সাব–ক্যাম্প রয়েছে। এগুলোর নামকরণ হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, জসীমউদ্‌দীন, সুফিয়া কামাল, জীবনানন্দ দাশ, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, হ‌ুমায়ূন আহমেদ, সৈয়দ শামসুল হক, শামসুর রাহমান, ইমরান নূর ও এম মহবুব উজ জামানের নামে।
বাংলাদেশ স্কাউটসের উপপরিচালক মশিউর রহমান বলেন, ‘অনেক ছেলেমেয়েই আমাদের বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার সম্পর্কে ভালো করে জানে না। অনেক কবি–সাহিত্যিক সম্পর্কে জানা নেই। স্কাউটরা যাতে তাঁদের সম্পর্কে ভালো করে জানতে পারে, সেদিক চিন্তা করেই মূল অ্যারেনা, ভিলেজ ও সাব–ক্যাম্পের নামকরণ হয়েছে।