অর্থসংকটে থেমে আছে ভবনের নির্মাণকাজ

হাসপাতালের নির্মাণাধীন ভবন।
হাসপাতালের নির্মাণাধীন ভবন।

বরাদ্দের অভাবে থমকে আছে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট মুন্সিগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতালের ভবন নির্মাণের কাজ। হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগে খুশি ছিল এই জেলার মানুষ। তবে এখন কাজ বন্ধ থাকায় হতাশ রোগী ও স্থানীয় লোকজন। ডায়াবেটিক সমিতি বলছে, প্রকল্প মেয়াদ অনুযায়ী ভবনের কাজ সম্পূর্ণ না হলে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়েও সমস্যা তৈরি হবে।
মুন্সিগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার চরশিলমান্দি এলাকায় ৮৪ শতাংশ জমিতে ডায়াবেটিক হাসপাতালের ছয়তলা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্টার লাইট সার্ভিসেস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। হাসপাতালটিতে সাধারণ শয্যার পাশাপাশি থাকবে কেবিন। উন্নত চিকিৎসার জন্য থাকবে সিসিইউ। থাকবে ল্যাবরেটরি ও কিডনি ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা। ডায়াবেটিসজনিত যেকোনো ধরনের উন্নত চিকিৎসাসেবা থাকবে এই হাসপাতালে। ভবন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। অবশিষ্ট টাকার জন্য আপাতত কাজ বন্ধ আছে।
গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালটির ভবনের নির্মাণকাজ থেমে আছে। শুধু ফটক নির্মাণের কাজ চলছে। পাশে নির্মাণসামগ্রী ছড়ানো অবস্থায় পড়ে আছে।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এলাকার কমপক্ষে ১০ জন রোগীর সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, মুন্সিগঞ্জে ডায়াবেটিসের জন্য ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। রক্ত ও মূত্র পরীক্ষা ছাড়া অন্য কোনো সেবা পাওয়া যায় না। চিকিৎসক দেখাতে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। কোনো রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে ঢাকায় নিতে হয়। মুন্সিগঞ্জে আধুনিক চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থাসহ নতুন হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার খবরে রোগীরা আশান্বিত হয়েছিলেন। তবে কাজ থেমে থাকায় তাঁরা হতাশ। ভবনটির কাজ শেষ করে দ্রুত হাসপাতাল চালুর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

মুন্সিগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. আখতার হোসেন জানান, মুন্সিগঞ্জ জেলায় প্রতিদিন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৩০০ রোগী সেবা নিতে যান। এ জেলায় প্রতি ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে ১ জন টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। সচেতনতার অভাবে অনেকেই জানে না যে তাঁদের ডায়াবেটিস আছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ভাড়া নিয়ে একটি ভবনে বহির্বিভাগের ডায়াবেটিস রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। গুরুতর রোগীদের অভ্যন্তরীণ বিভাগে সেবা নিতে ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে। নতুন ভবনে হাসপাতালটি চালু হলে এই অঞ্চলের মানুষের ডায়াবেটিস চিকিৎসার জন্য রাজধানী ঢাকায় ছুটতে হবে না। ডায়াবেটিক হাসপাতালটি চালু হলে অসহায় ও দরিদ্র রোগীরা স্বল্প খরচে চিকিৎসাসেবা পাবেন।
মুন্সিগঞ্জ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি মো. মজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতাল নির্মাণের অর্থ ২১ ভাগ সমিতি ও ৭৯ ভাগ সরকারের বহন করার কথা। আমাদের অংশটুকু আমরা দিয়েছি, সরকারি অংশের টাকার জন্য ভবন নির্মাণের কাজ আটকে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।’ তিনি জানান, হাসপাতালের কাজ সম্পূর্ণ না হলে যন্ত্রপাতিও তোলা যাবে না।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. সামান আলী বলেন, ‘আমরা ৭০ ভাগের বেশি কাজ শেষ করেছি। অর্থসংকটের কারণে লিফট স্থাপন, বৈদ্যুতিক কাজসহ আনুষঙ্গিক কিছু কাজ এখনো শুরু করা হয়নি। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করা হবে।’
মুন্সিগঞ্জ গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুন্সিগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতালের কাজ প্রায় শেষের দিকে। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দের কোনো অর্থ পাওয়া যায়নি। তাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে টাকা দেওয়া যায়নি। গত মঙ্গলবার আইএমডির এক কর্মকর্তা নির্মাণাধীন হাসপাতালটি পরিদর্শন করেছেন। আশা করি, শিগগিরই অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যাবে। আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে হাসপাতাল নির্মাণের কাজ শতভাগ শেষ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ভবন হস্তান্তর করা সম্ভব হবে।’