আন্দোলনের মুখে খুলে দেওয়া হলো খেয়াঘাট

খেয়াঘাট চালু রাখার দাবিতে বইঠা হাতে মাঝিদের বিক্ষোভ। গতকাল কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগর আলম মার্কেট এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
খেয়াঘাট চালু রাখার দাবিতে বইঠা হাতে মাঝিদের বিক্ষোভ। গতকাল কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগর আলম মার্কেট এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

মাঝি, তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে সদরঘাট এলাকায় বন্ধ করা দুটি ঘাট খেয়া নৌকা পারাপারের জন্য আবার খুলে দেওয়া হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে সদরঘাটে একটি লঞ্চের ধাক্কায় নৌকায় থাকা সাতজনের মৃত্যুর পর গত সোমবার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সদরঘাট থেকে কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ এবং সিমসনঘাট থেকে কালীগঞ্জ পথে নৌকা চলাচল বন্ধ করে দেয়। সেদিন ওয়াইজঘাট থেকে আগানগর পথে নৌকা চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। এ জন্য ওয়াইজঘাটে পন্টুনও বসানো হয়েছিল। গত মঙ্গলবার রাতে বিআইডব্লিউটিএ ওয়াইজঘাট এলাকায় স্থাপন করা পন্টুন খুলে নেয়।

মাঝিরা জানান, গতকাল বুধবার সকালে সদরঘাট থেকে কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ, সিমসনঘাট থেকে কালীগঞ্জ পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা নদীতে খেয়া নৌকা চলাচল শুরু হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ এতে কোনো বাধা দেয়নি।
বিআইডব্লিউটিএর ঘাট বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার বিক্ষোভে নামেন মাঝি, তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা। কেরানীগঞ্জ এলাকার সাংসদ এবং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ফোন করে নৌকা চলাচলের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেন।

বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা জানান, বিক্ষোভ ও প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশের পর ওয়াইজঘাট থেকে পন্টুন সরিয়ে নেওয়া হয় এবং আগের দুটি ঘাট খুলে দেওয়া হয়।
গতকাল সকাল থেকে কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগর আলম মার্কেট গুদারাঘাট থেকে পুরান ঢাকার সিমসনঘাট ও চর কালীগঞ্জ তেলঘাট থেকে শ্যামবাজার ঘাট দিয়ে খেয়া নৌকা ও ট্রলারযোগে লোকজনকে যাতায়াত করতে দেখা গেছে।
এদিকে গতকাল বিকেলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগর গুদারাঘাট, রাজধানীর পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাট ও শ্যামবাজার ঘাট এলাকা পরিদর্শন করেন। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে আমরা মাস্টারপ্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) গ্রহণ করতে যাচ্ছি। সদরঘাটকে আমরা গণবান্ধব করব।’ খেয়াঘাট নিয়ে সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে যান্ত্রিক যান চলছে, সেখানে খেয়া নৌকায় পারাপার চলতে পারে না। এতে সংঘর্ষ বাধবেই। জনগণের সুবিধার্থে ফেরি, ওয়াটার বাস এবং প্রয়োজনে কেব্‌ল কারের ব্যবস্থা করা হবে।’
নসরুল হামিদ বলেন, এখানে নদীতে নৌকা দিয়ে পারাপার হতে গিয়ে দুর্ঘটনায় ডুবে লোকজন মারা যাচ্ছে। এ সমস্যাটির সমাধান দরকার। হঠাৎ করে ঘাটটি বন্ধ করে দিলে নদীপথে মানুষের পারাপার ও ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। এখানে কয়েক হাজার পোশাক কারখানা আছে। এখানকার তৈরি পণ্য বাজারে ও পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে সমস্যা হয়ে যাবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একমত হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা জানান, আপাতত ঘাট দিয়ে নৌকা পারাপার আগের মতোই চলবে। নতুন পরিসরে ঘাট নির্মাণ করা হলে তখন এসব ঘাট বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে কবে ঘাট তৈরি শেষ হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে পারেনি কেউ।

প্রতিমন্ত্রীদের পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুস সামাদ, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর এম মাহবুব
উল ইসলাম, নৌ পুলিশের ডিআইজি শেখ মোহাম্মদ মারুফ হাসান।