বন্ধ হচ্ছে না এলোপাতাড়ি পার্কিং

সচিবালয়ের সামনের আবদুল গণি সড়কে যত্রতত্র অবৈধভাবে গাড়ি পার্ক করে রাখা হয়। এ কারণে মূল সড়কের গাড়ি চলাচলের জায়গা সরু হয়ে যায়। গতকালের দৃশ্য।  প্রথম আলো
সচিবালয়ের সামনের আবদুল গণি সড়কে যত্রতত্র অবৈধভাবে গাড়ি পার্ক করে রাখা হয়। এ কারণে মূল সড়কের গাড়ি চলাচলের জায়গা সরু হয়ে যায়। গতকালের দৃশ্য। প্রথম আলো

সচিবালয়ের কিছু কর্মকর্তা এবং সেখানে আসা ব্যক্তিদের গাড়ি সচিবালয়ের সামনের ভিআইপি সড়কের দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা দখল হয়ে থাকে। ব্যস্ত এ সড়কের পার্কিং নিষেধের জায়গায় একাধিক সারির ব্যক্তিগত গাড়ির কারণে এ পথে চলাচলকারী গাড়িগুলো আটকে যায়। লেগে যায় যানজট

জিপিও মোড় থেকে সচিবালয়ের দক্ষিণের এ সড়ক আবদুল গণি রোড। এই সড়কের শিক্ষা ভবনের মোড় পর্যন্ত গাড়ি পার্ক করে রাখতে দেখা যায়। সচিবালয়ের সামনের উত্তর ও দক্ষিণ পাশের সড়কেই পার্কিং নিষেধের জায়গায় সারিবদ্ধভাবে দেড় শতাধিক গাড়ি রাখা। সড়কের উত্তর অংশে এই সারি কম হলেও দক্ষিণ অংশের দুই–তৃতীয়াংশ জায়গা দখল হয়ে থাকে গাড়িতে। যতটুকু খালি জায়গা থাকে, তা দিয়ে পূর্ব দিক থেকে আসা গাড়িগুলো কেবল একটি করে চলতে পারে। এখানে রাখা গাড়ির অধিকাংশই বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের।

গতকাল বুধবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, জিপিও মোড় থেকে সড়কের দক্ষিণ দিকে ওসমানী উদ্যান, ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি যানবাহন মেরামত কারখানা, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সেন্ট্রাল কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার ও রেল ভবনের সামনে এবং উত্তর দিকে বিদ্যুৎ ভবনের সামনে ১৫০টির বেশি গাড়ি রাখা আছে। অধিকাংশ গাড়ি ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’ লেখা মনোগ্রাম, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মনোগ্রামযুক্ত।

ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ দক্ষিণের এক সদস্য দিনদুপুরে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে এলোমেলোভাবে পার্কিংয়ে থাকা গাড়িগুলোর ভিডিও করে নিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, এ কাজ প্রায়ই করেন। অনেক গাড়ির বিরুদ্ধে মামলাও হয়। তারপরও সচিবালয়ের সামনের রাস্তায় অবৈধভাবে রাখা গাড়ির সারি কমে না। গাড়ি রাখার বিকল্প জায়গা থাকলে এ সমস্যা দূর হতো বলে তিনি মনে করেন।
জানা যায়, শুক্র ও শনিবার বাদে প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এসব গাড়ি সড়কের ওপর অবৈধভাবে রাখা হয়। এ কারণে অন্য গাড়ি ও পথচারীদের এই পথে চলাচলে নাকাল হতে হয়।

আবদুল গণি সড়কের মোড়ে দায়িত্বরত আনসার সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সড়কের দক্ষিণে এক সারিতে গাড়ি রাখতে বলা হয়েছে। তবে অনেক গাড়ির চালকই তা মানে না। তারা একাধিক সারি করে ফেলে। আমরা তাদের সরিয়ে দিই। এখানে সচিবালয়ের গাড়ি, স্টাফদের জন্য রাখা বিআরটিসির দ্বিতল বাস রাখা হয়। আবার এখানে যাঁরা গাড়ি রাখেন, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। এতে প্রতিদিনই যানজট হয়।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক দক্ষিণ) এস এম মুরাদ আলী বলেন, ‘ভিআইপি সড়কে পার্ক করা বৈধ নয়। তবে এখানে হঠাৎ করে গাড়ি রাখা হচ্ছে না বহু বছর ধরে। মূল সড়কে যাতে কোনো গাড়ি না থাকে, সে জন্য আমরা সচিবালয়কে প্রস্তাব করেছি, তাদের পরিবহন পুলে বা কারখানার ভেতরে গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করতে।’ তিনি বলেন, ‘এটি একটি স্পর্শকাতর জায়গা। সচিবালয়ের বিভিন্ন পদবির কর্মকর্তার গাড়ি এখানে রাখা হয়। আমরা না রাখার জন্য জোর করতে পারি না। আমরা বারবারই তাঁদের এক সারিতে গাড়ি রাখতে বলি। আর আমাদের নিয়মিত বাহিনী গিয়ে ভিডিও মামলা করে।’