ভোট ছাড়াই নৌকার ১১০ চেয়ারম্যান

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপির স্থানীয় নেতাদের অংশগ্রহণ কমছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। সরকারি দল ছাড়া অন্য দলগুলোর প্রার্থী নেই অধিকাংশ জেলায়। এতে পাঁচ ধাপে হওয়া নির্বাচনের প্রতিটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে যাওয়া প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রথম চার ধাপ মিলে নৌকা প্রতীকের অন্তত ১১০ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান হচ্ছেন বিনা ভোটে।

চতুর্থ ধাপের ১২২টি উপজেলায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল গতকাল বুধবার। বেশ কয়েকটি উপজেলায় গতকাল সরে গেছেন নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। এতে ৪০টি উপজেলায় চেয়ারম্যান হতে ভোট করতে হচ্ছে না নৌকার প্রার্থীদের। ইতিমধ্যেই প্রথম ধাপে ১৫ জন নির্বাচিত হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। দ্বিতীয় ধাপে ২৫ ও তৃতীয় ধাপে ৩০টি উপজেলার চেয়ারম্যানও ভোট ছাড়াই জিততে যাচ্ছেন।

দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রথম আলোর প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, বাগেরহাটের নয়টি উপজেলার মধ্যে ছয়টিতে চেয়ারম্যান হতে ভোট লাগবে না নৌকার প্রার্থীর। বাকি তিনটি উপজেলায় দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে লড়বেন নৌকার প্রার্থীরা। এর মধ্যে সদরে সরদার নাসির উদ্দীন, কচুয়ায় বর্তমান চেয়ারম্যান এস এম মাহফুজুর রহমান, শরণখোলায় বর্তমান চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীন, মংলায় বর্তমান চেয়ারম্যান আবু তাহের হাওলাদার ও রামপালে মোয়াজ্জেম হোসেন শুরু থেকেই ছিলেন একক প্রার্থী। প্রতিদ্বন্দ্বীরা মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর চিতলমারীর অশোক কুমার বড়াল এখন একক প্রার্থী। এ ছাড়া সদরে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ফকিরহাটে দুটি ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।

ফেনীর ছয়টি উপজেলার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে এককভাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন পরশুরামে কামাল উদ্দিন মজুমদার, দাগনভূঞায় দিদারুল কবীর, সোনাগাজীতে জহির উদ্দিন মাহমুদ ও ছাগলনাইয়ায় মেজবাউল হায়দার চৌধুরী। প্রতিদ্বন্দ্বীরা প্রত্যাহারের পর ফুলগাজীর আবদুল আলিমও একক প্রার্থী। ফলে শুধু সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে এবার। এ ছাড়া চারটি ভাইস চেয়ারম্যান পদেও ভোট ছাড়া জয়ী হচ্ছেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা। এর মধ্যে পরশুরাম উপজেলায় কোনো পদেই প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় নির্বাচনের প্রয়োজন হচ্ছে না।

কুমিল্লার ১৩টি উপজেলার মধ্যে ৫টিতে নির্বাচন করার প্রয়োজন হচ্ছে না। এ পাঁচ উপজেলার চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের ১৫টি পদেই ভোট ছাড়া জয়ী হতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এর মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হচ্ছেন লাকসামে মো. ইউনুস ভূঁইয়া, মনোহরগঞ্জে জাকির হোসেন, নাঙ্গলকোটে সামছুদ্দিন, দেবীদ্বারে মো. জয়নুল আবেদীন ও চৌদ্দগ্রামে মো. আবদুস ছোবহান ভুঁইয়া।

ময়মনসিংহের সদর উপজেলায় আশরাফ হোসাইন, গফরগাঁওয়ে আশরাফ উদ্দিন ও ফুলবাড়িয়ায় আবদুল মালেক সরকারের ভোট লাগবে না চেয়ারম্যান হতে। যশোরের শার্শায় শুরু থেকেই একক প্রার্থী ছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল হক। প্রতিদ্বন্দ্বীরা প্রত্যাহারের পর সদর উপজেলায় এখন একক প্রার্থী শাহীন চাকলাদার। ভোলা সদরে মোশারেফ হোসেন, মনপুরায় শেলিনা আকতার চৌধুরী, দৌলতখানে মনজুরুল আলম খান একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন। তাঁরা সবাই বর্তমান চেয়ারম্যান। এ ছাড়া ছয় ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হচ্ছেন ভোট ছাড়া। ভোলা সদরে তিন পদেই একক প্রার্থী থাকায় ভোটের প্রয়োজন নেই।

পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় মিরাজুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় মো. রাশেদুল কাওছার ভূঁইয়া ও আখাউড়ায় আবুল কাশেম ভূঁইয়া, ঢাকার সাভারে মঞ্জুরুল আলম, দোহারে মো. আলমগীর হোসেন ও কেরানীগঞ্জে বর্তমান চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ, খুলনার বটিয়াঘাটায় বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল আলম খান ও ফুলতলীতে শেখ আকরাম হোসেন, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে হারুন অর রশীদ, মধুপুরে সরোয়ার আলম খান ও গোপালপুরে ইউনুস ইসলাম তালুকদার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন।

বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ২০-দলীয় জোট ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও এ নির্বাচন বর্জন করেছে। দলীয় নির্দেশ না মেনে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় কয়েক ধাপে ১২১ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগও সমঝোতা করছে দলের বিদ্রোহীদের সঙ্গে। তাই প্রতিটি ধাপে মনোনয়ন জমা দেওয়া প্রার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সরকারি দলের মিত্র দলগুলোর প্রার্থী নেই বেশির ভাগ উপজেলায়। এখন পর্যন্ত তাই অধিকাংশ উপজেলায় ভোটের লড়াই ধরে রেখেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, এবার ৪৮১টি উপজেলায় মোট পাঁচ ধাপে নির্বাচন হচ্ছে। প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ হয় ১০ মার্চ। দ্বিতীয় ধাপে ভোট ১৮ মার্চ, তৃতীয় ধাপে ২৪ মার্চ এবং চতুর্থ ধাপে ৩১ মার্চ। এ ছাড়া পঞ্চম ধাপের ভোট গ্রহণ করা হতে পারে পবিত্র রমজানের পর।