দুদককে ঘিরে সক্রিয় প্রতারক চক্র!

সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) ঘিরে একটি প্রতারক চক্র বেশ সক্রিয়। দুদক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে। এ বিষয়ে সংস্থাটি সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে এ–সংক্রান্ত তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

দুদক বলছে, তারাও বিষয়টি জেনেছে। এ প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে কমিশনের নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট সক্রিয় রয়েছে। জানা গেছে, দুদকের কর্মকর্তা, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নাম ব্যবহার করে দেশে-বিদেশে একাধিক প্রতারক বা প্রতারক চক্র সক্রিয় রয়েছে। তারা কমিশনের মামলা অথবা কমিশনের কাল্পনিক মামলা অথবা কাল্পনিক অভিযোগ থেকে অব্যাহতি অথবা অভিযুক্ত করা হচ্ছে জানিয়ে টেলিফোনের মাধ্যমে অনৈতিক অর্থ দাবি করছে। আবার এমনও অনেক প্রতারক আছে, যারা কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনকি কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন দপ্তর বা সংস্থায় বিভিন্ন অনৈতিক তদবিরও করছে। প্রতারক চক্র কোনো কোনো ক্ষেত্রে কমিশনের কর্মকর্তাদের আত্মীয়, বন্ধু কিংবা অন্য কোনো স্বজন পরিচয় দিয়ে অনৈতিক তদবির করছে।

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধে বহুমাত্রিক ব্যবস্থা নিয়েছে কমিশন। কমিশনের গোয়েন্দা তৎপরতায় গত ৭ নভেম্বর দুদকের একটি বিশেষ দল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর রাজ হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট থেকে প্রতারক ফয়সল রানা ওরফে মো. ফয়েজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় পল্টন মডেল থানায় একটি করা হয়।

প্রণব ভট্টাচার্য জানান, গত ২৪ জানুয়ারি নয়াপল্টন এলাকা থেকে দুদক কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী হাসান মুন্না ওরফে রফিককে গ্রেপ্তার করে তাঁর বিরুদ্ধে পল্টন থানায় মামলা করা হয়। দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব-২ এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেলের (এনটিএমসি) যৌথ অভিযানে আরেক ভুয়া দুদক কর্মকর্তা নাজমাকে (আসল নাম রাজু মিয়া) ১৪ ফেব্রুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। একইভাবে র‌্যাব-২ এবং এনটিএমসির যৌথ দল ভুয়া দুদক কর্মকর্তা কথিত সিরাজুল ইসলাম ওরফে হাজি জহিরুল হুদা ওরফে প্রশান্ত ওরফে সুশান্ত ওরফে মনিরুজ্জামান মিয়া ওরফে শহিদুল ইসলামকে (প্রকৃত নাম আনিসুর রহমান বাবুল) ঢাকার হাজারীবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।

দুদক বলছে, প্রতারকদের আইন আমলে আনা একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা কমিশন নিরলসভাবে পরিচালনা করছে। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। দুর্নীতি দমন কমিশনের আইন অনুসারে কোনো একক ব্যক্তির অভিপ্রায় অনুসারে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার যেমন কোনো সুযোগ নেই, তেমনি অভিযুক্ত হওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া কমিশনের কর্মকর্তাদের অভিযোগের অনুসন্ধান ও তদন্ত বিষয়ে শুধু চিঠির মাধ্যমেই যোগাযোগের নির্দেশনা রয়েছে, টেলিফোন বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নয়।

দুদক এ বিষয়ে তথ্য চেয়ে সবার সহায়তা চেয়েছে। তারা বলছে, যদি কোনো ব্যক্তি কমিশনের কর্মকর্তা কিংবা কমিশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নাম ব্যবহার করে টেলিফোন বা ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে কমিশনের কর্মকর্তা বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের স্বজন পরিচয় দিয়ে অনৈতিক কোনো বিষয়ে তদবির করে বা অনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে, তাহলে এই টেলিফোনের সত্যতা নিশ্চিত হতে হবে। ওই ব্যক্তির পরিচয়ের নিশ্চয়তা এবং প্রতিকার পাওয়ার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে দুদকের পরিচালক (গোয়েন্দা) মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী (মোবাইল নম্বর- ০১৭১১-৬৪৪৬৭৫) অথবা উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্যের (মোবাইল নম্বর-০১৭১৬-৪৬৩২৭৬) সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছে সংস্থাটি।