এক প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়েছেন ইউএনও, অভিযোগ আরেক প্রার্থীর

যশোরের কেশবপুরে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এইচ এম আমির হোসেন গতকাল বুধবার যশোরের জেলা প্রশাসকের কাছে ইউএনওর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেছেন।

৩১ মার্চ হতে যাওয়া পঞ্চম ধাপের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে কেশবপুর থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এইচ এম আমির হোসেন। অন্যদিকে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কাজী রফিকুল ইসলাম আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ এম আমির হোসেন গতকাল যশোরের জেলা প্রশাসকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, নির্বাচনে কাজী রফিকুল ইসলামের পক্ষে কেশবপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানূর রহমান প্রকাশ্যে ভোট চাচ্ছেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, প্রার্থী হওয়ার পর থেকে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছেন না আমির হোসেন। তাঁর অভিযোগ, সেই গাড়ি ব্যবহার করে ইউএনও প্রকাশ্যে রফিকুল ইসলামের পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। তিনি বিভিন্ন বাজারে বলছেন, বর্তমান চেয়ারম্যান এই গাড়িতে আর বসতে পারবেন না।

অভিযোগে বলা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তা ও বেসরকারি শিক্ষকদের হুমকি দিচ্ছেন ইউএনও। তিনি বলছেন, উপজেলা নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের সময় চেয়ারম্যানের পক্ষে কেউ থাকলে তাঁর চাকরি খাওয়া হবে। রফিকুল ইসলামের পক্ষে রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। উপজেলা চেয়ারম্যানের পক্ষে না থাকার জন্যে কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলামকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও করা হয়েছে। এসব অভিযোগ উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দ্রুত প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন এইচ এম আমির হোসেন।

কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাঁকে হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, স্থানীয় সাংসদের বিপক্ষে গিয়ে আমির হোসেনের পক্ষে ভোট করলে মেয়র থাকতে পারবেন? পৌরসভা চলাবেন কীভাবে?

উপজেলা চেয়ারম্যান এইচ এম আমির হোসেন বলেন, ‘ইউএনও রফিকুল সাহেবের পক্ষে ভোট চাইতে আমার গাড়ি ব্যবহার করে বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেন।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘গৌরিঘোনা এবং ভরতভায়না বাজারে ইউএনও বলেছেন, এ গাড়িতে আমির হোসেন আর উঠতে পারবেন না।’

কেশবপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানূর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের অভিযোগটি কল্পনাপ্রসূত ও মনগড়া। তাঁর দাবি, তিনি সরকারি কর্মকর্তা হয়ে কারও পক্ষে ভোট চাননি। ইউএনও আরও বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়িটি চেয়ারম্যানের নিজের নয়, এটি উপজেলা পরিষদের গাড়ি। কাউকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি।

যশোরের জেলা প্রশাসক আবদুল আওয়াল প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যানের দেওয়া একটি অভিযোগ পেয়েছি। পারস্পরিক ভুল–বোঝাবুঝি হয়েছে। ইউএনওকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়ি ব্যবহার না করার জন্যে তাঁকে সতর্ক করা হবে।’