দায়িত্ব না নিলে পদ হারাবেন নুরুল

নুরুল হক
নুরুল হক

ডাকসুর নবনির্বাচিত সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে দ্বিধায় আছেন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দায়িত্ব না নিলে একপর্যায়ে তাঁকে পদ হারাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে নবনির্বাচিতদের অভিষেক অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করেছে।
নির্বাচিত হওয়ার কত দিনের মধ্যে এবং কীভাবে দায়িত্ব গ্রহণ হবে, তা স্পষ্ট উল্লেখ নেই ডাকসুর গঠনতন্ত্রে। তবে গঠনতন্ত্রে হল সংসদের ক্ষেত্রে বলা আছে, নির্বাচনের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার পর সংসদের সভাপতি নতুন নির্বাহী কমিটির কাছে কার্যালয়ের দায়িত্ব অর্পণের জন্য তারিখ ঘোষণা
করবেন। নবনির্বাচিত নির্বাহী কমিটি যত দ্রুত সম্ভব অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।

দীর্ঘ ২৮ বছর ১০ মাস পর প্রায় সব সংগঠন ও জোটের অংশগ্রহণে ১১ মার্চ ডাকসু ও হল সংসদগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে ভোট গ্রহণের মাঝপথে ছাত্রলীগ ছাড়া বাকি সব সংগঠন ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়। এ নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) ও একটি সম্পাদকীয় পদে জয়ী হন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্রার্থী। সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য পদগুলোতে জয়ী হয় ছাত্রলীগ।

কারচুপির অভিযোগে ভোট বর্জনের পরও ভিপি পদে জয়ী হন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্রার্থী নুরুল হক। সূত্র জানায়, ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সঙ্গে অন্য যারা ভোট বর্জন করেছিল, তাদের একটি অংশ চায় নুরুল হক যেন ভিপি হিসেবে দায়িত্ব না নেন। তবে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ মনে করে, নুরুল হকের দায়িত্ব নেওয়া উচিত।

নুরুল হক ভিপি হিসেবে দায়িত্ব না নিলে কী হবে তা নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে। নির্বাচিত কেউ দায়িত্ব না নিলে কী হবে, সে বিষয়ে ডাকসুর গঠনতন্ত্রে কিছু বলা নেই। তবে গঠনতন্ত্রে বলা আছে, সহসভাপতির অনুপস্থিতিতে সভাপতি (উপাচার্য) সর্বোচ্চ এক মাসের জন্য সাধারণ সম্পাদক বা অন্য কোনো সম্পাদক বা সদস্যকে সহসভাপতির দায়িত্ব দিতে পারবেন।

গঠনতন্ত্রে বলা আছে, নির্বাহী কমিটির কোনো সদস্য টানা তিনটি বৈঠকে অনুপস্থিত থাকলে তিনি তাঁর পদ হারাবেন। সে ক্ষেত্রে সাধারণ নিয়মে নির্বাচনের মাধ্যমে ওই পদ পূরণ করা হবে। অর্থাৎ নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক যদি দায়িত্ব না নেন, তাহলে টানা তিন বৈঠকে অনুপস্থিতির পর তিনি পদ হারাবেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার নুরুল হক, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেনসহ চারজন উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেছেন। নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, উপাচার্য তাঁদের অভিষেক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলেছেন। জবাবে তিনি বলেছেন, অভিষেকের আগে চলমান আন্দোলনের বিষয়ে সুরাহা হওয়া উচিত।

এর আগে গত মঙ্গলবার নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তিনি অবশ্যই দায়িত্ব নেবেন। তবে গতকাল তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তিনি মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ‘তাঁরা যদি চান যে আমি ভিপি হিসেব দায়িত্ব নিয়ে তাঁদের জন্য লড়াই–সংগ্রাম করি, তাহলে আমি সেটা করব। তাঁরা যদি না চান, তাহলে আমি দায়িত্ব নেব না।’
জানতে চাইলে উপাচার্য ও পদাধিকারবলে ডাকসুর সভাপতি মো. আখতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, শপথের কোনো বিষয় নেই, নবনির্বাচিতদের অভিষেক হবে। মাত্র নির্বাচন শেষ হলো। অভিষেক নিয়ে তাড়াহুড়া করা হবে না, আবার বেশি দেরিও করা হবে না। শিগগির অভিষেক অনুষ্ঠান হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর নবনির্বাচিত সহসাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রথা অনুযায়ী অভিষেক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নবনির্বাচিতদের দায়িত্ব দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে তাঁদের আলোচনা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি নিচ্ছে। খুব কম সময়ের মধ্যে সবাইকে নিয়ে অভিষেক অনুষ্ঠান করা হবে।