তুরাগতীরে মজুত করা কয়লা নিলামে

তুরাগতীরে অভিযান চালিয়ে অবৈধ সীমানাদেয়াল ভেঙে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। গতকাল আমিনবাজার এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
তুরাগতীরে অভিযান চালিয়ে অবৈধ সীমানাদেয়াল ভেঙে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। গতকাল আমিনবাজার এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

মোহাম্মদপুর, গাবতলী ও সাভারের আমিনবাজার এলাকায় তুরাগ নদের দুই তীরে গড়ে তোলা ব্যক্তিগত জেটি, সীমানাদেয়ালসহ ৫৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। একই সঙ্গে পরিবেশদূষণের অভিযোগে আমিনবাজারে তুরাগের উত্তর পাশে গড়ে তোলা কয়লা ব্যবসার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে নিলাম ডেকে মজুত কয়লা বিক্রি করে দেওয়া হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার পর বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী হাকিম মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে ঢাকা উদ্যানের শেষ প্রান্ত থেকে এই অভিযান শুরু হয়। আমিনবাজারে বিআইডব্লিউটিএর ল্যান্ডিং স্টেশনের কাছে বিকেল চারটায় গতকালের অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন তিনি।

বিআইডব্লিউটিএ জানায়, গতকাল উচ্ছেদ করা অবৈধ স্থাপনার মধ্যে আছে তুরাগের দুই তীরে গড়ে তোলা ১৫টির মতো ব্যক্তিগত জেটি, ২১টি টংঘর ও ২০টির মতো সীমানাদেয়াল।
অভিযান চলাকালে গতকাল দুপুরে বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী হাকিম মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, তুরাগতীরের এসব স্থাপনা নিজ উদ্যোগে সরিয়ে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আগেই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কয়েক দফা মাইকিংও করা হয়েছে। এরপরেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ায় স্থাপনাগুলো ভেঙে দেওয়া হলো।

দুপুরে বিআইডব্লিউটিএর গাবতলী ল্যান্ডিং স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, তুরাগের বিপরীত পাড়ে নদের সীমানার মধ্যে গড়ে তোলা কিছু সীমানাদেয়াল ভাঙার কাজ চলছে। নদের দুই তীরেই তখন শত শত উৎসাহী মানুষের ভিড় চোখে পড়ে। একই পাড়ের অদূরে আমিনবাজার ল্যান্ডিং স্টেশনের কাছে চলছিল নদের তীরে হাঁটাপথ ঘেঁষে স্তূপ করে রাখা কয়লা অপসারণের কাজ।
কাছে গিয়ে দেখা যায়, তুরাগের তীরে হাঁটাপথ ঘেঁষে আনুমানিক দেড় শ ফুট বাই দু শ ফুট জায়গার পুরোটা কয়লার দখলে। এক পাশে কিছু চুনাপাথরও রাখা। হাঁটাপথ উপচে কয়লা গিয়ে পড়ছে নদের পানিতে। এ সময় বিআইডব্লিউটিএর সহকারী পরিচালক নূর হোসেন বলেন, স্তূপ করে রাখা কয়লার মালিক রাজ গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। কয়লা সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি মৌখিকভাবে বলার পরেও তারা এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তা ছাড়া এখানে কয়লার ব্যবসা পরিচালনার জন্য কোনো বৈধ কাগজপত্রও তারা দেখাতে পারেনি।

এই অবস্থায় স্তূপ করে রাখা কয়লা ও চুনাপাথর জব্দ করে তা বিক্রি করে দেওয়ার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে নিলামের আয়োজন করে বিআইডব্লিউটিএ। নিলামে অংশ নেন সাত ব্যক্তি। শুরুতে নিলামের ভিত্তিমূল্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হলে নিলামে অংশগ্রহণকারীরা তাতে রাজি হননি। পরে ১০ লাখ টাকা ভিত্তিমূল্য ধরে নিলাম শুরু হয়। এতে ২৫ লাখ টাকা দর হেঁকে সব কয়লা ও চুনাপাথর কিনে নেন দেলোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তি। এর সঙ্গে ভ্যাট ও আয়কর মিলিয়ে তাঁকে বিআইডব্লিউটিএকে ৩০ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে।

এর আগে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগতীরে মোট আটটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও জমি উদ্ধার করা হয়। গত ২৯ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সপ্তাহে তিন দিন করে প্রথম দফায় ১২ দিন অভিযান চালানো হয়। এর পর বিরতি দিয়ে ৫ মার্চ থেকে দ্বিতীয় দফার অভিযান শুরু হয়। গতকাল ছিল দ্বিতীয় দফা অভিযানের ষষ্ঠ দিন।