ফ্রেমে বাঁধানো ভালো লাগার ছবি

দোকানে ছবি পছন্দ করছেন ক্রেতারা। বুধবার রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে । ছবি: আশরাফুল আলম
দোকানে ছবি পছন্দ করছেন ক্রেতারা। বুধবার রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে । ছবি: আশরাফুল আলম

দিগন্ত ছুঁয়ে থাকা সবুজ মাঠ। দূরে গ্রামের রেখা। মাঠের মাঝখানে মাথা তুলে আছে জোড়া তালগাছ। তার এক পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে আঁকাবাঁকা নদী। আবহমান বাংলার দৃষ্টি স্নিগ্ধ করা দৃশ্য। জলরঙে আঁকা। এই ছবিই পছন্দ হলো লালমাটিয়ার রুখসানা আহমেদের। সাদা পিভিসি মাউন্ট দিয়ে নকশা করা ফ্রেমে বাঁধানো ছবিটির দাম ৮০০ টাকা। কিনে নিলেন বসার ঘরের দেয়াল সাজানোর জন্য।
গত বুধবার দুপুরে ঢাকা নিউমার্কেটের উত্তর অংশে নিউ সুপার মার্কেটে রুখসানা আহমেদ এসেছিলেন মূলত রান্নাঘরের কিছু জিনিস কিনতে। এখানেই ছবির দোকানের দেয়ালে ঝুলতে থাকা ওই ছবি তাঁর মনে ধরে যায়। নিউ সুপার মার্কেটে হাঁড়িপাতিল, বিছানা-বালিশের আচ্ছাদন, তেল-মসলা থেকে হরেক কিসিমের পণ্যের বিপুল বৈচিত্র্যময় সম্ভারে ছবির দোকানও আছে পাঁচটি। এগুলো উত্তর পাশের মাঝ বরাবর।
বিসমিল্লাহ ইন্টারন্যাশনাল নামের ছবির দোকানটি এখানে চালু হয়েছিল ১৯৯০ সালে। ব্যবসায়ী আবদুল মতিন জানালেন, মাঝখানে ছবির ব্যবসায় বেশ মন্দা পড়েছিল। তখন ছবি নামিয়ে দোকানে তৈজসপত্র তুলেছিলেন। ২০০০ সাল নাগাদ আবার ফিরেছেন আগের ব্যবসায়। এখন বেশ ভালোই চলছে। এখানে ছবির ব্যবসার ইতিহাসটাও জানা গেল তাঁর কাছে। আশির দশকে প্রথম একটি ছবির দোকান ছিল নিউমার্কেটের উত্তর দিকের ফটক-সংলগ্ন সিঁড়ির তলায়। ‘স্মরণিকা’ নামে ওই দোকান দিয়েছিলেন মো. বাবুল। পরে আরেকটি দোকান হয়েছিল ‘চম্পাকলি’ নামের। এ দোকান দুটি আর নেই। এখন আছে আর্ট কর্নার, এফ এম আর্ট, এম রহমান আর্ট-এসব দোকান। ছবির ব্যবসায়ী মো. রনি ও মো. ইয়াসিন জানালেন, এসব দোকান হয়েছে বছর দশেকের মধ্যে।
রংতুলিতে জলরং বা অ্যাক্রিলিক আঁকা ছবির পাশাপাশি এসব ছবির দোকানে ফ্রেমে বাঁধানো কৃত্রিম ছবিও আছে প্রচুর। এসব ফ্রেম চীন থেকে আনা। ফুলদানিতে সাজানো ফুল, প্রাকৃতিক দৃশ্য-এসবই বেশি। মার্বেল পাথরের মতো দেখতে এক রকমের জিনিস দিয়ে তৈরি। বিক্রেতারা এর নাম বললেন ‘ফাইবার স্টোন’। এগুলোর দাম আকারভেদে ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া আছে মেশিন এমব্রয়ডারি করা প্রাকৃতিক দৃশ্য।
ছবির পাশাপাশি আছে ক্যালিগ্রাফি। পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াত, কোনোটি ধাতব রঙের প্রলেপ দেওয়া, কোনোটি সোনালি রঙের। এগুলোও অধিকাংশ এসেছে চীন থেকে। এগুলোরও দাম ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ দেড় হাজার টাকার মধ্যে। তবে খুব সূক্ষ্ম জরির সুতা আর মখমলের ওপর কাজ করা কিছু ক্যালিগ্রাফি আছে তুরস্ক ও ইরান থেকে আনা। এগুলোর দাম একটু চড়া। ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
ছবির ব্যবসায়ীরা জানালেন, আঁকা ছবিগুলো তাঁরা সংগ্রহ করেন চারুকলা থেকে উত্তীর্ণ নবীন শিল্পীদের কাছ থেকে। অনেক সময় তাঁরা ছবির বিষয়বস্তু বলে ছবি আঁকিয়ে নেন। অনেক ছবিতে শিল্পীর স্বাক্ষর থাকে, অনেক ক্ষেত্রে থাকে না। তবে এখানে যাঁরা ছবি কিনতে আসেন, তাঁরা শিল্পীর স্বাক্ষরের বিষয়টিতে তেমন গুরুত্ব দেন না। বিমূর্ত ছবির চেয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্যের চাহিদাই বেশি।
ছবির দোকানে এখন বিক্রি বেশ ভালোই। প্রতিদিন ১৫-২০টি ফ্রেম বিক্রি হয়। বিক্রেতারা জানালেন, মানুষের রুচির বদল হচ্ছে। নিজের ঘরে রাখার পাশাপাশি উপহার হিসেবেই লোকে বেশি কিনে থাকে সুদৃশ্য ফ্রেমে কাচ দিয়ে বাঁধানো এসব ছবি বা ক্যালিগ্রাফি। বাণিজ্যিক দোকানের এসব ছবির শিল্পমূল্য নিয়ে ক্রেতারা ভাবেন না, তাঁদের কাছে চোখের দেখায় ভালো লাগাই মুখ্য। ভালো লাগার চেয়ে বড় কথা আর আছেই-বা কী।