মোটরসাইকেলের জন্য নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি

তাঁরা সবাই বন্ধু। একই রাজনৈতিক দলের কর্মীও। কিন্তু একটি মোটরসাইকেলের জন্য নিজেদের মধ্যেই বিরোধ দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত গড়ায় খুনোখুনিতে। খুন হওয়া বন্ধুটি চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ইয়াছিন আরাফাত।

সন্ত্রাসী অমিত মুহুরী মোটরসাইকেল কেড়ে নেন তাঁরই বন্ধু ইয়াছিনের। পরে তিনি সেটি বিক্রি করে দেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় সালিসের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হন অমিত মুহুরী। তাঁর সহযোগীদের নিয়ে প্রকাশ্যে রাস্তায় ছুরিকাঘাতে খুন করেন ইয়াছিনকে।

দুই বছর তদন্ত শেষে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে এসব বিষয় উঠে আসে। গত বৃহস্পতিবার আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে অমিতসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়। এটি গ্রহণের শুনানির জন্য এখনো তারিখ পড়েনি।

অমিতের চার সহযোগী হলেন হারুন রশিদ, মো. হৃদয়, আবু বক্কর ও মো. তারেক। চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজকেন্দ্রিক ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে তাঁরা জড়িত।

২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নগরের ব্যস্ততম রিয়াজউদ্দিন বাজারের আমতল এলাকায় দিনদুপুরে কলেজছাত্র ইয়াছিন আরাফাতকে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর মা রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।

ঘটনার শুরু থেকে মামলাটি তদন্ত করেন কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হারুন অর রশিদ। আদালতে দেওয়া এ মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ঘটনার ১৫ দিন আগে ইয়াছিনের মোটরসাইকেলটি জোর করে কেড়ে নেন অমিত। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সিটি কলেজের এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে সমঝোতায় হারুন, হৃদয়, বক্কর ও তারেক ৫০ হাজার টাকা দিতে বাধ্য হন। বৈঠক শেষে ইয়াছিন বাসায় যাওয়ার পথে আমতল এলাকায় তাঁকে ছুরি মারেন হারুনসহ অন্য আসামিরা। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। কয়েকজনের হাতে অস্ত্রও ছিল। তবে অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি।

পুলিশ সূত্র জানায়, নিহত ইয়াছিনও অমিতের অনুসারী ছিলেন। কিন্তু কিছু বিষয় নিয়ে ভুল–বোঝাবুঝি হলে ইয়াছিনের ওপর ক্ষিপ্ত হন অমিত। জোর করে কেড়ে নেন মোটরসাইকেল। তাঁরা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই হারুন অর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তারের পর জামিনে রয়েছেন চার আসামি। কারাগারে আছেন অমিত মুহুরী। তাঁরা সবাই একই রাজনৈতিক দল করতেন। একে অপরের বন্ধুও।

মামলার বাদী ও নিহত ইয়াছিনের মা রোকেয়া বেগম বলেন, ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল তাঁর। যাতে আর কোনো মায়ের স্বপ্ন ভেঙে না যায়, আসামিদের এমন শাস্তি চান তিনি।

কে এই অমিত
পুলিশ জানায়, অমিতের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজির ১৫টি মামলা রয়েছে। পূর্বাঞ্চল রেলের কোটি টাকার দরপত্র নিয়ে জোড়া খুনের মামলার আসামিও তিনি। ২০১৩ সালের ২৪ জুন চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকায় ওই দরপত্র নিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক শিশুসহ দুজন নিহত হয়। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক হেলাল আকবর চৌধুরী ওরফে বাবরের অনুসারী অমিত। অমিত আলোচনায় আসেন বন্ধুকে হত্যার ঘটনায়। ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরের এনায়েতবাজার এলাকার রানীরদীঘি থেকে একটি ড্রাম উদ্ধার করে পুলিশ।

প্রথমে বোমা রয়েছে ভাবা হলেও ড্রাম কেটে ভেতরে লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ গলে যাওয়ায় তখন পরিচয় বের করা যায়নি। পরে এ ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে ৩১ আগস্ট ইমাম হোসেন ও শফিকুর রহমান নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা পুলিশকে বলেন, ড্রামের ভেতরে পাওয়া লাশটি অমিতের বন্ধু নগর যুবলীগের কর্মী ইমরানুল করিমের। ৯ আগস্ট নগরের নন্দনকানন হরিশ দত্ত লেনের নিজের বাসায় ইমরানুলকে ডেকে নেন অমিত। এরপর বাসার ভেতরেই তাঁকে হত্যা করা হয়।