বুলেটপ্রুফ গাড়িতে ফিরলেন 'বিদ্রোহী'

এলাকা ছাড়ার ২২ মাস পর কুমিল্লার তিতাস উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রচারণা চালাতে এসেছেন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ চেয়ারম্যান প্রার্থী পারভেজ হোসেন সরকার। গতকাল শুক্রবার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ও বুলেটপ্রুফ গাড়িতে করে ঢাকা থেকে এলাকায় আসেন তিনি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহিনুল ইসলাম এখানে দলটির চেয়ারম্যান প্রার্থী। বাতাকান্দি বাসস্ট্যান্ডে চাঁদা আদায় নিয়ে বিরোধের জের ধরে ২০১৭ সালের ১১ মে শাহিনুল ও পারভেজের পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এরপর এলাকাছাড়া হন পারভেজ।

পারভেজের এলাকায় আসা উপলক্ষে আওয়ামী লীগের ওই দুই পক্ষের মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। সংঘর্ষের আশঙ্কায় গতকাল তিতাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ উপলক্ষে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে টহল দেন।

পারভেজ হোসেন সরকার উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। ২০০৯ সালে তিনি তিতাস উপজেলা পরিষদের প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি বিএনপির প্রার্থীর কাছে হেরে যান। এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন চান। কিন্তু দল মনোনয়ন দেয় ২০১৪ সালে নির্বাচিত উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনুলকে। এরপর পারভেজ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। গত বৃহস্পতিবার প্রতীক বরাদ্দের পরই তিনি প্রচারণার জন্য এলাকায় এলেন।

পারভেজ হোসেন সরকার বলেন, ‘গতকাল সকাল সাতটায় ঢাকা থেকে তিতাসের উদ্দেশে রওনা হই। বেলা তিনটায় বাতাকান্দি এলাকায় বাবা বেলায়েত হোসেনের কবর জিয়ারত করি। এরপর কালাই গোবিন্দপুর গ্রামে মামার বাড়ি যাই। এখানে থেকেই আমি নির্বাচনী প্রচারণা চালাব। প্রশাসন আমার নিরাপত্তা দেবে।

পারভেজ হোসেন সরকার আরও বলেন, দীর্ঘদিন পর এলাকার আসায় বুলেটপ্রুফ গাড়ির আগে ও পেছনের গাড়িতে চারজন ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। পুলিশ, র‌্যাব ও উপজেলা প্রশাসন আমাকে সহযোগিতা করছে। নিরাপত্তারক্ষীদের বিষয়টি থানায় লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।’

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১১ মে বেলা একটা থেকে দেড়টা পর্যন্ত বাতাকান্দি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পারভেজ ও শাহিনুলের অনুসারীদের মধ্যে গোলাগুলি চলে। এতে শাহিনুলের অনুসারী মো. তপু (২৫) নামের যুবলীগের এক কর্মী আহত হন। এ সময় তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও পারভেজের গাড়িতে গুলি করা হয়।

এরপর পারভেজ আর তিতাসে আসেননি। তিনি ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় থাকেন। গত বছরের ২৭ জুলাই এই এলাকার মসজিদ থেকে জুমার নামাজ পড়ে ফেরার পথে তাঁকে অপহরণ করা হয়। পরদিন তাঁকে রাজধানীর ৩০০ ফুট এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে শাহিনুলের লোকজন জড়িত থাকতে পারে বলে তখন পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।

দলীয় সূত্রে আরও জানা যায়, ৪ মার্চ পারভেজ পুলিশের পাহারায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এরপর পুলিশ তাঁকে দাউদকান্দির টোল প্লাজা পর্যন্ত এগিয়ে দেয়।

জানতে চাইলে পারভেজ হোসেন সরকার আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহিনুল ইসলাম একটি হত্যা মামলায় ফেরারি আসামি। তাঁর জামিন চেম্বার জজ স্থগিত করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচটি হত্যা মামলা আছে। আমাকে সন্ত্রাসী কায়দায় রাজনীতির মাঠ থেকে নির্বাসিত করতে চান তিনি। জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রায় দেবেন।’

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মুঠোফোনে কয়েকবার কল করা হলেও শাহিনুল ইসলাম ধরেননি।

জানতে চাইলে তিতাস থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আহসানুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে তিতাসে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে ঝামেলা হতে পারে। তাই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।