মুক্তিযোদ্ধা তালিকা নিয়ে আইনি জটিলতা

>

• আপাতত তালিকা প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত
• কারও নাম বাদ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত
• ২৬ মার্চ বা তার আগে তালিকা প্রকাশের কথা ছিল
• তবে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে মন্ত্রণালয়
• তালিকা প্রণয়নে আইনগত অনেক জটিলতা রয়েছে

এবার ২৬ মার্চ মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না। আইনি জটিলতার কারণে আগের তালিকা থেকে কোনো মুক্তিযোদ্ধার নাম বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে কবে নাগাদ এ তালিকা প্রকাশ করা হবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে কেউ বলতে পারছে না।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে এ–সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে আপাতত কোনো ধরনের তালিকা প্রকাশ না করার বা কারও নাম বাদ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিল (জামুকা) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, সভায় এবং জাতীয় সংসদে বলে আসছেন, ২৬ মার্চ বা তার আগে মুক্তিযোদ্ধাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করবেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সংসদে সাতক্ষীরা-২ আসনের মীর মোস্তাক আহমেদের প্রশ্নের লিখিত উত্তরে মন্ত্রী বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে যাচাই-বাছাই করে তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব তালিকা পর্যালোচনা করে ২৬ মার্চের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে। প্রথম আলোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারেও তিনি একাধিকবার একই বক্তব্য দিয়েছেন। তবে সে সিদ্ধান্ত থেকে এখন সরে এসেছে মন্ত্রণালয়।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী মোজাম্মেল হকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে আমরা ভেবেছিলাম, যেসব তালিকা নিয়ে প্রশ্ন নেই, আমরা সেগুলো ২৬ মার্চ প্রকাশ করব। কিন্তু এ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে দেখলাম, তালিকা প্রণয়নে আইনগত অনেক জটিলতা রয়েছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। এ ছাড়া জামুকা আইন ২০০২ অনুযায়ী জামুকার বৈঠক বা অনুমোদন ছাড়া তালিকা প্রকাশ বা তালিকা থেকে কাউকে বাদ দেওয়া যাবে না। তাই আমরা আপাতত কোনো তালিকা প্রকাশ করছি না।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জামুকার কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ কাউন্সিল আইন হয়েছে ২০০২ সালে। এ আইনে বলা আছে, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন, সনদ ও প্রত্যয়নপত্র প্রদানে এবং জাল ও ভুয়া সনদ ও প্রত্যয়নপত্র বাতিলের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠাবে জামুকা। ফলে ২০০২ সাল থেকে সব গেজেট জামুকার বৈঠকের সুপারিশের মাধ্যমেই হওয়ার কথা। কিন্তু মন্ত্রণালয় জানতে পেরেছে, ২০০২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার গেজেট জামুকার সুপারিশ ছাড়াই হয়েছে। তাই এখন এসব গেজেটকে আলাদা করা হবে। কেউ যদি সঠিক কাগজপত্র দেখাতে পারেন, তাহলে তাঁর গেজেট বাতিল হবে না। তবে যাঁরা প্রকৃত কাগজপত্র দেখাতে বা প্রমাণ দিতে পারবেন না, তাঁদের গেজেট বাতিল করা হবে। আইনগত প্রক্রিয়া মেনে এ কাজ শেষ করতে অনেক সময় লাগবে। জামুকার কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন, যাঁদের লাল মুক্তিবার্তা বা ভারতীয় তালিকায় নাম নেই। এমনকি গেজেটেও নাম নেই কিন্তু তাঁদের কেউ ২০০৪ থেকে, কেউ ২০১০ থেকে নিয়মিত ভাতা পাচ্ছেন। সেগুলো বাতিল করে আবার আবেদন করতে বলা হবে।

মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী তিন মাস ধরে বলে আসছেন, তাঁরা ২৬ মার্চ ১৯ ক্যাটাগরির প্রায় দুই লাখ (১ লাখ ৯৯ হাজার ৯৩৫) মুক্তিযোদ্ধার নামের তালিকা আপাতত প্রকাশ করবেন। একই সঙ্গে ২০০৫ সাল থেকে (বিএনপি আমল) বিভিন্ন সময়ে করা ৩৪ হাজার ৪৪৩ জনের বেসামরিক গেজেট স্থগিত করা হবে। শুধু তা–ই নয়, আগের মন্ত্রিসভায় থাকাকালে তিনি ২৬ মার্চ তালিকা প্রকাশ করার কথা বলেছিলেন।