অসময়ের বৃষ্টিতে মাথায় হাত সবজিচাষিদের

খুলনার বটিয়াঘাটার উত্তর শৈলমারী বিল। ছবি: প্রথম আলো
খুলনার বটিয়াঘাটার উত্তর শৈলমারী বিল। ছবি: প্রথম আলো

খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের কৈয়া বাজার থেকে দক্ষিণ দিকে কয়েক কিলোমিটার গেলেই উত্তর শৈলমারী বিল। বিশাল ওই বিলের কিছু অংশজুড়ে রয়েছে সবুজ ধানখেত। বাকি অংশ শুধুই ধু-ধু মাঠ। সেখানে কোনো ফসলের চিহ্ন নেই।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, সেচ দেওয়ার সুবিধা আছে এমন জমিতে বোরো ধান লাগানো হয়েছে। আর বিলের অন্য জমিতে আবাদ করা হয়েছিল তরমুজসহ বিভিন্ন সবজির। কিন্তু অসময়ের বৃষ্টিতে সব চারা মরে গেছে। এখন নতুন করে কোনো ফসল লাগানোরও সময় নেই। তাই জমিগুলো ওভাবেই পড়ে আছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় টানা বৃষ্টি। প্রায় এক সপ্তাহ চলা ওই বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। প্রথম দিকে বৃষ্টিকে আশীর্বাদ মনে করা হলেও পরবর্তী সময়ে তা পরিণত হয় অভিশাপে। ওই বৃষ্টি বোরো ধানচাষিদের জন্য উপযোগী হলেও সর্বনাশ হয়েছে সবজিচাষিদের।

শৈলমারী বিলটি খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়নের উত্তর শৈলমারী গ্রামে অবস্থিত। ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিলের পশ্চিম পাশের সামান্য কিছু জমিতে লাগানো হয়েছে বোরো ধান। গ্রামের কৃষক রিপন বৈরাগীর গভীর সেচযন্ত্র ঘিরেই ওই ধানের চাষ। এ ছাড়া বিলের অন্যান্য অংশের মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় দেখা গেছে জমি চাষ করা। কিন্তু সেখানে কোনো ফসলের চিহ্ন নেই। বাকি অংশে কেটে নেওয়া আমন ধানগাছের গোড়া এখনো রয়ে গেছে। বিশাল বিলের মাঝ বরাবর কাটা হচ্ছে খাল। একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে ওই মৃতপ্রায় খালটি কাটা হচ্ছে বলে স্থানীয় লোকজন জানান।

গ্রামের কয়েকজন কৃষক বলেন, খননের কাজ চলায় খালটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে অসময়ের বৃষ্টিতে পানি আর সরতে পারেনি। তাই বিলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এতে তাঁদের লাগানো সব সবজির গাছ মারা গেছে। ধানগাছের ফাঁকে ফাঁকেও ঢ্যাঁড়সসহ বিভিন্ন সবজির বীজ বপন করা হয়েছিল। সঞ্জয় বৈরাগী বলেন, আমান ধান তোলার পর তিনি ওই বিলের প্রায় চার বিঘা জমিতে চাষ করেছিলেন উচ্ছে, করলা, তরমুজ, ঝিঙে, মিষ্টিকুমড়া ও শিমের। গাছে যখন তিন থেকে চারটি পাতা বের হয়েছে, তখনই শুরু হয় বৃষ্টি। প্রথম দিন বৃষ্টিতে তেমন ক্ষতি না হলেও পরপর কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে বিলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। সব গাছ চলে যায় পানির নিচে। এ কারণে গাছগুলো মারা গেছে।

বটিয়াঘাটা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপবিভাগীয় কৃষি কর্মকর্তা জীবানন্দ রায় বলেন, ওই বিলের খালটি খনন হচ্ছে। এ কারণে খালের দুই মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে কয়েক দিনের একটানা বৃষ্টিতে বিলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এ কারণে যাঁরা সবজির চাষ করেছিলেন, তাঁরা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক পঙ্কজ কান্তি মজুমদার বলেন, অসময়ের বৃষ্টিতে সবজি, তরমুজ ও মসুরের সামান্য ক্ষতি হয়েছে, এটা ঠিক। তবে বোরো ধানচাষিরা ব্যাপক লাভবান হয়েছেন। গত বছর বৃষ্টি অনেক কম হয়েছিল। এ কারণে চলতি বছরের শুরুতে সব খাল-বিল শুকিয়ে যায়। তাই বোরো আবাদ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসের বৃষ্টিতে সেই আশঙ্কা কেটে গেছে। বোরো ধানের জমিতে সেচের ব্যবস্থা হয়েছে। এবার খুলনায় ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হচ্ছে।