রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেবেন রোকেয়া হলের আন্দোলনকারীরা

রোকেয়া হলের প্রভোস্টের পদত্যাগসহ নানা দাবিতে হলের প্রশাসনিক কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঢাবি, ১৬ মার্চ। ছবি: প্রথম আলো
রোকেয়া হলের প্রভোস্টের পদত্যাগসহ নানা দাবিতে হলের প্রশাসনিক কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঢাবি, ১৬ মার্চ। ছবি: প্রথম আলো

প্রভোস্ট জিনাত হুদার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ছাত্রীরা হলের কক্ষগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, প্রভোস্টকে পদচ্যুত করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। 

গত বুধবার আন্দোলনকারীরা প্রভোস্টের পদত্যাগসহ চার দফা দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি গ্রহণ করেন। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁরা অনশন স্থগিত করে প্রভোস্টকে পদত্যাগের জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। শুক্রবার রাতে আলটিমেটামের সময়সীমা শেষ হওয়ায় এবং প্রভোস্ট পদত্যাগ না করায় আন্দোলনকারীরা হলের প্রভোস্টের বাংলোসহ তিনটি প্রশাসনিক কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের পক্ষে শ্রবণা শফিক দীপ্তি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রভোস্টের পদত্যাগের জন্য হলের শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে গণস্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত (সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা) ৫০০ শিক্ষার্থী সই করেছেন। এই গণস্বাক্ষর স্মারকলিপি আকারে দুই দিনের মধ্যে উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে পাঠানো হবে।’

প্রশাসনিক কক্ষে তালা লাগানোর বিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রভোস্ট জিনাত হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শনিবার এমনিতেও প্রশাসনিক কাজ বন্ধ থাকে। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে রোববারও বন্ধ থাকবে। তাই প্রশাসনিক কাজ ব্যাহত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যদিবস শুরুর আগেই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আন্দোলনকারীদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রভোস্ট বলেন, ‘আন্দোলন করছে পাঁচ থেকে ছয়জন শিক্ষার্থী। আর হলে থাকে প্রায় সাতাশ শ শিক্ষার্থী। সুতরাং এখানে পাঁচ ছয়জনের দাবি আমলে নেওয়ার প্রসঙ্গ কেন উঠছে?’
প্রভোস্টের বক্তব্যের বিষয়ে শ্রবণা শফিক দীপ্তি বলছেন, ‘প্রভোস্ট নিয়মিত নির্লজ্জের মত মিথ্যাচার করছেন। তিনি মামলা করেও অস্বীকার করছেন। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর দাবিকে বলছেন পাঁচ ছয়জনের দাবি। কিন্তু আন্দোলনের সময় সবাই দেখেছে হলের হাজার হাজার শিক্ষার্থী প্রভোস্টকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন।’

গত বুধবার রাত নয়টায় চার দফা দাবিতে হলের ফটকে আমরণ অনশনে বসেন পাঁচ শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন চারজন। অনশনের দ্বিতীয় দিন গত বৃহস্পতিবার রাত সোয়া নয়টার দিকে তাঁরা অনশন স্থগিত করেন।
অনশনে বসা শিক্ষার্থীরা হলেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের রাফিয়া সুলতানা, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সায়েদা আফরিন, একই বিভাগের জয়ন্তী রেজা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শ্রবণা শফিক দীপ্তি ও ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের প্রমি খিশা। রাফিয়া সুলতানা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্যানেল থেকে রোকেয়া হল সংসদে সহসভাপতি (ভিপি), সায়েদা আফরিন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন থেকে হল সংসদে সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস), শ্রবণা শফিক দীপ্তি স্বতন্ত্র জোট থেকে ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদে স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক পদে আর প্রমি খিশা হল সংসদে সদস্য পদে ছাত্র ফেডারেশনের প্রার্থী ছিলেন। জয়ন্তী রেজা প্রার্থী ছিলেন না।
আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো হলো—প্রভোস্ট জিনাত হুদার পদত্যাগ, হল সংসদের পুনর্নির্বাচন, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

রোকেয়া হলের প্রভোস্টের পদত্যাগসহ নানা দাবিতে হলের প্রশাসনিক কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঢাবি, ১৬ মার্চ। ছবি: প্রথম আলো
রোকেয়া হলের প্রভোস্টের পদত্যাগসহ নানা দাবিতে হলের প্রশাসনিক কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঢাবি, ১৬ মার্চ। ছবি: প্রথম আলো