শেষ হলো দুই দিনের জাতীয় ফিজিকস অলিম্পিয়াড

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নবম ডাচ-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো জাতীয় ফিজিকস অলিম্পিয়াডে শিক্ষার্থীরা। সিলেট, ১৬ মার্চ। ছবি: আনিস মাহমুদ
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নবম ডাচ-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো জাতীয় ফিজিকস অলিম্পিয়াডে শিক্ষার্থীরা। সিলেট, ১৬ মার্চ। ছবি: আনিস মাহমুদ

মহাকর্ষ কেন সবচেয়ে দুর্বল বল? জোনাকি পোকা থেকে কেন ১০০ শতাংশ আলো পাওয়া যায়? প্যারালাল ইউনিভার্সের অস্তিত্ব আছে কি? থাকলে এর প্রভাব কী? কাচের মধ্যে কেন নিজের চেহারা দেখতে পাই? বিগ ব্যাং-এর আগে স্থান, কাল ছিল না, তাহলে কী ছিল? 

আজ শনিবার সকালে নবম ডাচ-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো জাতীয় ফিজিকস অলিম্পিয়াডের সমাপনী দিনে অংশগ্রহণকারী কিশোরদের এমন কৌতূহলী প্রশ্নে জমে ওঠে প্রশ্নোত্তর পর্ব। শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম আরশাদ মোমেন। সকাল পৌনে ১০টা থেকে প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়। চলে সোয়া ১১টা পর্যন্ত। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ফিজিকস অলিম্পিয়াডের সমাপনী পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসে শাবিপ্রবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অটুল তালুকদার ও তাঁর দল।
অটুলের দলের পর ছিল একই বিভাগের আরেক সাবেক শিক্ষার্থী প্রিয়াঙ্কা দাস তিথির একক পরিবেশনা। মণিপুরি স্কুল অব কালচার অ্যান্ড আর্টের শান্তনা দেবীর পরিচালনায় মনোমুগ্ধকর মণিপুরি নৃত্য দর্শকদের মাতিয়ে রাখে। একুশে পদকপ্রাপ্ত সংগীতশিল্পী সুষমা দাশ লোকজ গান গেয়ে শোনান।

বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের গান গেয়ে শোনান করিমশিষ্য বাউল আবদুর রহমান। তিনি গেয়ে শোনান শাহ আবদুল করিমের জনপ্রিয় দুটি গান, ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম...’ এবং ‘মাটিরও পিঞ্জিরায় সোনার ময়নারে, তোমারে পুষিলাম কত আদরে...।’ মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব, পয়লা বৈশাখ, পয়লা ফাল্গুনসহ বাঙালির সাংস্কৃতিক উৎসব ও জাতীয় দিবস নিয়ে র‌্যাম্প মডেলদের পরিবেশনা ছিল এক কথায় অনবদ্য।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শুরু হয় সমাপনী পর্ব। এ পর্বে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফিজিকস অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক এফ এ জাহাঙ্গীর মাসুদ। বাংলাদেশ ফিজিকস অলিম্পিয়াড দলের কোচ ও অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক এম আরশাদ মোমেন বলেন, ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক ফিজিকস অলিম্পিয়াড বাংলাদেশে আয়োজনের চেষ্টা করা হচ্ছে। পৃথিবী দ্রুত এগোচ্ছে। তোমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে।

জাতীয় ফিজিকস অলিম্পিয়াডে চলছে প্রশ্ন-উত্তর পর্ব। সিলেট, ১৬ মার্চ। ছবি: আনিস মাহমুদ
জাতীয় ফিজিকস অলিম্পিয়াডে চলছে প্রশ্ন-উত্তর পর্ব। সিলেট, ১৬ মার্চ। ছবি: আনিস মাহমুদ

‘এ’ ক্যাটাগরির পুরস্কার ঘোষণা করতে মঞ্চে আসেন অলিম্পিয়াডের প্রধান সমন্বয়ক শরীফ মো. শরাফ উদ্দিন। এই ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয় খুলনা জিলা স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র এস এম আবদুল ফাত্তাহ। প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপ হয় যথাক্রমে আন্তর্জাতিক তার্কিশ হোপ স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফুয়াজ ইকবাল ও চট্টগ্রাম গ্রামার স্কুলের অদ্রিজা ভট্টাচার্য। এ ক্যাটাগরিতে ১৫ জন শিক্ষার্থীকে পদক ও সনদ দেওয়া হয়। ১৭ জনকে অনারেবল মেনশন হিসেবে শুধু সনদ দেওয়া হয়।

‘বি’ ও ‘সি’ ক্যাটাগরির পুরস্কার দেওয়ার আগে বক্তব্য দেন অলিম্পিয়াডের আহ্বায়ক অধ্যাপক সামসুন নাহার বেগম । প্রথম আলোর যুব কর্মসূচির সমন্বয়ক মুনির হাসান শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানচিন্তা, কিশোর আলো ও প্রথম আলো পড়ে কি না, তা জানতে চান। প্রায় সবাই হাত উঁচিয়ে হ্যাঁ বলে সাড়া দেয়। মুনির হাসান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, রং, ধর্ম ও বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে সবার ভালো মানুষ হওয়ার জন্য কাজ করতে হবে।
অলিম্পিয়াডের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, ‘যারা সফল হয়েছো তাদের অভিনন্দন । আর যারা সফল হতে পারোনি তাদেরও অভিনন্দন।’ প্রযুক্তি মেলার সমন্বয়ক অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ভূমিকা প্রশংসনীয়। আর প্রথম আলোর প্রচারের মাধ্যমে সবাই অলিম্পিয়াড সম্পর্কে জেনে যাচ্ছে ও প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পরে ‘বি’ ও ‘সি’ ক্যাটাগরির বিজয়ী শিক্ষার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয় রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী সিফাত আহমেদ তুষার। প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপ যথাক্রমে কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী গোলাম ইশতিয়াক ও আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী মিনহাজুর রহমান চৌধুরী। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ৩০ জন শিক্ষার্থীকে পদক ও সনদ দেওয়া হয়। ১০ জনকে অনারেবল মেনশন হিসেবে শুধু সনদ দেওয়া হয়।

আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী ও গত বছরের বাংলাদেশ ফিজিকস অলিম্পিয়াড দলের সদস্য রাশেদুল ইসলাম ‘সি’ ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়। এ ছাড়াও সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের আতিকুল ইসলাম ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী রিফাকাত রাস্কি যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপ হয়। এ ছাড়া ১১ জনকে অনারেবল মেনশন হিসেবে শুধু সনদ দেওয়া হয়।
সভাপতির বক্তব্যে সমাপনী অনুষ্ঠানের সভাপতি মুহম্মদ জাফর ইকবাল আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। এর আগে গতকাল শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে নবম ডাচ-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো জাতীয় ফিজিকস অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন করা হয়। দুই দিনের এ জাতীয় অলিম্পিয়াডের ব্যবস্থাপনায় ছিল বাংলাদেশ ফিজিকস অলিম্পিয়াড কমিটি। আয়োজনে ভেন্যু দিয়ে সহযোগিতা করছে শাবিপ্রবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ। শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে তিন ঘণ্টার মূল অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে ছিল বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মজার মজার খেলা। ট্রেজার হান্ট নামে গেইম খেলতে পুরো শাবিপ্রবি ঘুরে বেরিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
বেলা তিনটার দিকে শেষ হয় দুই দিনের এ মিলনমেলা। একে একে সব শিক্ষার্থী মিলনায়তন থেকে বেরিয়ে আসে। আর তাদের চোখে-মুখে ফিজিকস বিশ্বজয়ের প্রত্যয়। দল বেঁধে বের হওয়ার সময় কয়েকজন বলেছে, ‘আগামী আসরে দেশের সেরা হব।’ তাদের একজন চ্যালেঞ্জ করে অন্যদের বলে, ‘দেখিস, আগামীতে আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে গিয়ে দেশের জন্য স্বর্ণ জয় করে নিয়ে আসব।’