তিন বন্ধুর ক্ষোভের বলি কিশোর মোস্তাফিজুর

গলা চেপে ধরে রেখে পাথর দিয়ে উপর্যুপরি মাথা ও মুখে আঘাত করা হয়। নিস্তেজ হয়ে পড়লে পাথর দিয়ে অণ্ডকোষ থেঁতলানো হয়। প্রায় নিথর দেহ তখনো কিছুটা নড়াচড়া করছিল। তা দেখে এবার গলায় নাইলনের রশির শক্ত গিট্টু দিয়ে তিনজন মিলে টেনে ধরে রাখে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরই লাশ মাঠের এক কোণে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় তারা।

এ বর্ণনা সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার মান্দারুকা গ্রামে কিশোর মোস্তাফিজুর রহমান (১খুন৫) হত্যাকাণ্ডের। এমন নৃশংস কায়দায় তাকে হত্যা করে তারই সমবয়সী তিন কিশোর। গতকাল শনিবার সিলেট জেলা পুলিশের এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়। ওই তিন কিশোরের একজন আটক হওয়ার পর বিচারিক হাকিম আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। পুলিশের কাছে তারা যে স্বীকারোক্তি দিয়েছিল, একই বর্ণনা আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতেও এসেছে বলে পুলিশ সূত্র নিশ্চিত করেছে।

গত শুক্রবার সকালে ওসমানীনগর উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের মান্দারুকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে মোস্তাফিজুরের মাথা ও মুখের একাংশ থেঁতলানো অবস্থায় লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মোস্তাফিজুর মান্দারুকা গ্রামের দিনমজুর আবদুল মছব্বিরের ছেলে। গত বৃহস্পতিবার রাতে সমবয়সী তিনজন বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার পরদিন তার লাশ উদ্ধার হয়।

খুনের কারণ সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মান্দারুকা গ্রামের দুজন ও পাশের গ্রামের আরও এক কিশোরের সঙ্গে মোস্তাফিজুরের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। মুঠোফোনে অপরিচিত এক মেয়ের সঙ্গে কথা বলা নিয়ে মোস্তাফিজুরের সঙ্গে তাদের মনোমালিন্য হয়। মেয়েটির সঙ্গে ‘খারাপ কথা’ বলে সেগুলো মুঠোফোনে রেকর্ড করে মোস্তাফিজুরকে শোনাত ওই বন্ধুরা। মোস্তাফিজুর এতে আপত্তি জানিয়েছিল প্রায় এক মাস আগে। এ নিয়ে তিন বন্ধুর সঙ্গে তার প্রথম দফা ঝগড়া হয়। ১৩ মার্চ আবারও ওই বন্ধুরা মেয়েটির সঙ্গে বলা কথার রেকর্ড তাকে শোনালে মোস্তাফিজুর ক্ষুব্ধ হয়। তখন তিনজনের পরিবারকে ঘটনাটি জানিয়ে দেবে বলে হুঁশিয়ারি দেয় মোস্তাফিজুর। এ ক্ষোভে বৃহস্পতিবার রাতে মোস্তাফিজুরকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে খুন করে তারা।

অপরাধ প্রবণতার মধ্যে কিশোর বয়সের অনিয়ন্ত্রিত আক্রোশ থেকে বন্ধুর প্রতি তারা তিনজন এমন ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল বলে মনে করছেন সিলেট জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহ্বুবুল আলম। কিশোর অপরাধের ক্ষেত্রে এমনটি দেখা যায় জানিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তি পরবর্তী সময়ে আদালতেও দিয়েছে গ্রেপ্তার হওয়া এক কিশোর। তার দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে আটকের পরই খুনের বর্ণনা দেওয়ায় মোস্তাফিজুর হত্যা ঘটনায় ওসমানীনগর থানায় মামলা হয়েছে। মোস্তাফিজুরের মা মোছা. রাসনা বেগম বাদী হয়ে গ্রেপ্তার ওই কিশোরসহ পলাতক আরও দুজনকে এজাহারভুক্ত আসামি করেছেন। ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম আল-মামুন জানিয়েছেন, পলাতক দুজনকে গ্রেপ্তার করতে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে।