খননের দেড় বছর পরেই বড়ালের বুকে গম চাষ

রাজশাহীর চারঘাটে বড়াল নদ খননের দেড় বছরের মধ্যে পুনরায় ভরাট হয়ে গেছে। সেখানে চলছে গম চাষ। ছবিটি সম্প্রতি তোলা।  প্রথম আলো
রাজশাহীর চারঘাটে বড়াল নদ খননের দেড় বছরের মধ্যে পুনরায় ভরাট হয়ে গেছে। সেখানে চলছে গম চাষ। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। প্রথম আলো

দেড় বছর আগে ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ে খনন করা হয়েছে বড়াল নদের উৎসমুখ। ইতিমধ্যেই সেটি ভরাট হয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজন এবার বড়ালের তলায় গম চাষ করেছেন। এর আগে পাট চাষ করেছিলেন।

রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মা নদী থেকে বড়াল নদের উৎপত্তি হয়েছে। এটি রাজশাহীর চারঘাট, বাঘা, নাটোরের বাগাতিপাড়া, বনপাড়া ও বড়ালব্রিজ হয়ে যমুনায় মিশেছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫০ কিলোমিটার। এই নদের উৎসমুখ খনন করে মাটি এমনভাবে ফেলা হয়েছে, সে মাটিতেই আবার বড়ালের তলদেশ উঁচু হয়ে উঠেছে।

নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বড়াল নদের উৎসমুখের ১ হাজার ৮০০ মিটার এলাকার আবার খনন করা হয়। এতে ৭২ লাখ টাকার বেশি টাকা ব্যয় হয়। উৎসমুখের রেগুলেটরের পশ্চিম পাশে ১ হাজার ৫০০ মিটার এবং পূর্ব পাশে ৩০০ মিটার খনন করা হয়েছে। এই খননকাজ করার সময় রেগুলেটরের পশ্চিম পাশে মাটি তুলে কোনোমতে নদের পাড়েই ঢেলে রাখা হয়েছে। আর পূর্ব পাশে নদের মাঝবরাবরই মাটি স্তূপ করে রাখা হয়। সেবারই বর্ষায় পশ্চিম পাশে মাটি অনেকাংশেই ফের নদে নেমে গেছে। আর পূর্ব পাশের মাটি পানির তোড়ে নদের জলেই মিশেছে। তাতে নদের তলদেশ উঁচু হয়ে উঠেছে।

খননের পরের বর্ষায় নাটোরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন নাটোর পাউবোর কর্মকর্তাদের নিয়ে চারঘাটে বড়াল নদের উৎসমুখ পরিদর্শনে এসেছিলেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাঁকে ঘিরে ধরেন। বড়ালের মাঝখানে মাটি ফেলে রাখার জন্য তাঁরা জেলা প্রশাসকের কাছে পাউবোর বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সে সময় নাটোর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশ কুমার সরকার বলেছিলেন, দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী মাটি ফেলা হয়েছে। মাটি আরও দূরে নিয়ে গিয়ে ফেলতে হলে আগে সিএস ম্যাপ অনুযায়ী নদের জমি দখলমুক্ত করতে হবে। এ কাজ জেলা প্রশাসনের, পাউবোর নয়।

১৬ জানুয়ারি বড়াল নদের কাছে গিয়ে দেখা যায়, রেগুলেটরের পূর্ব পাশে নদের মাঝখানে বড়ালের তলদেশের যে অংশটুকু উঁচু হয়ে উঠেছে, তাতে স্থানীয় চাষিরা গম চাষ করেছেন। সেখানে পানিপ্রবাহের জায়গা একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। চারঘাট গুচ্ছগ্রামের চাষি আজিজুল ইসলাম (৩৮) এই গামচাষিদের একজন। নদের তলায় গম চাষ করার ব্যাপারে তিনি বলেন, নদের তলায় চর পড়েছে। এলাকার অনেকেই সেই চরে গম চাষ করছেন। তিনিও করেছেন। এর আগে এখানে গম চাষ করা হয়েছিল।

নাটোরের বনপাড়ার ‘পক্ষিকুলের আশ্রয় ও খাদ্য নিশ্চিতকরণ প্রকল্পের’ উদ্ভাবক ও সমন্বয়কারী যশোধন প্রামাণিক বলেন, বড়াল নদ খননের প্রকৃত আবেদনকারী হচ্ছেন তিনি। অথচ তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা না বলেই কর্তৃপক্ষ খননের নামে একতরফাভাবে অর্থহীন ব্যয় করে চলেছে। বড়ালকে নিয়ে পাউবোর সব কর্মকাণ্ডই ভুলে ভরা। এ জন্যই বড়ালের এ অবস্থা হয়েছে।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, বড়ালের ৪৭ কিলোমিটার এলাকায় সেচের জন্য পানি ধরে রাখার উদ্দেশ্যে উৎসমুখে ১৯৮৫ সালে চারঘাটে এবং পরে ভাটিতে নাটোরের আটঘোরিতে রেগুলেটর বসানো হয়। এরপর থেকে নদের পানির আগের প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগে এই নদ দিয়ে প্রায় ২১ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত হতো। এখন পাঁচ হাজার কিউসেক পানিও প্রবাহিত হয় না। বস্তুত বড়াল মরে গেছে।