চলচ্চিত্রে তামাকজাত পণ্যের প্রদর্শনে নিয়ম মানা হচ্ছে না

তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাগুলো বলছে, বাংলা চলচ্চিত্রে অপ্রয়োজনীয়ভাবে ধূমপানকে ক্ষমতা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে দেখানো হচ্ছে। কখনো জ্ঞানের প্রখরতা বোঝাতে, কখনোবা বাউন্ডুলেপনা বা নেতিবাচক চরিত্র চিত্রায়ণে ধূমপানের দৃশ্য ব্যবহার করা হয়েছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয়ভাবে তামাক ব্যবহার করা হয়েছে।

চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াৎ প্রথম আলোকে বলেন, শিল্প ও সৃজনশীলতার দোহাই দিয়ে চলচ্চিত্রে সব কিছু দেখানো যায় না। ধর্মীয় বিধিবিধান, সামাজিক প্রেক্ষাপট ও স্বাস্থ্যঝুঁকি আমলে নিয়ে তামাকের দৃশ্য এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকলে তা করা উচিত। কিন্তু তামাকজাত দ্রব্যের দৃশ্যায়ণে পরিচালকেরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না, যা ঠিক নয়।

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের বিধিমালা অনুযায়ী, চলচ্চিত্রে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শনকালে পর্দার (সিনেমা হল/ টেলিভিশন) আকারের অন্তত এক-পঞ্চমাংশ স্থান জুড়ে কালো জমিনের ওপর সাদা অক্ষরে বাংলা ভাষায় ‘ধূমপান/ তামাক সেবন মৃত্যু ঘটায়’ শীর্ষক স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদর্শন করতে হবে। ধূমপানের দৃশ্য যতক্ষণ চলবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সতর্কবাণী পর্দায় দেখাতে হবে।

তবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী চলচ্চিত্রে ধূমপানের দৃশ্য ব্যবহারে সমস্যা আছে। পর্দাজুড়ে এমন সতর্কবার্তা দর্শককে বিরক্ত করে, আবেগ নষ্ট করে। এ কারণে সিনেমার শুরু, মধ্যে ও শেষে এই সতর্কবার্তা দেওয়াই যৌক্তিক বলে মনে করেন তাঁরা। প্রায় একই ধরনের মত দিয়েছেন চলচ্চিত্র সমালোচক অধ্যাপক ফাহমিদুল হক। তবে তিনি বলেন, অকারণে, অতিরঞ্জিতভাবে এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। একই সঙ্গে চলচ্চিত্রে তামাক প্রদর্শনের বিষয়ে করা নীতিমালাটি পুনর্বিবেচনা করা দরকার।

জাতীয় চলচ্চিত্র নীতিমালা ২০১৭ অনুযায়ী, চলচ্চিত্রে তামাক, তামাকজাত পণ্য, মদ বা অ্যালকোহল সেবন ও অন্যান্য মাদক গ্রহণ দেখানো যাবে না। তবে চরিত্রের প্রয়োজনে মদ ও সিগারেট সেবন প্রদর্শন আবশ্যক হলে এ–সংক্রান্ত আইন/ বিধি অনুযায়ী এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কেও দর্শকদের অবহিত করতে হবে।

চলচ্চিত্র বোদ্ধারা বলছেন, সিনেমাতে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া তামাকের ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে। তবে এভাবে নিয়ম মেনে সতর্কবার্তা ব্যবহার দিতে গেলে সিনেমার নান্দনিকতা এবং নির্মাণশৈলী নষ্ট হবে। এ বিষয়ে ২০১৩ সালে শুধু তরুণদের ওপর একটি গবেষণা করেছে গ্লোবাল ইয়ুথ টোব্যাকো সার্ভে। এতে দেখা গেছে, বাংলাদেশে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী বিদ্যালয়গামী ছেলেমেয়েদের ৭ শতাংশ তামাক ব্যবহার করে। এর মধ্যে ছেলে ৯ শতাংশ এবং মেয়ে ৩ শতাংশ। প্রতিবছর দেড় লাখের বেশি মানুষ কেবল তামাকজাত দ্রব্য সেবনের কারণে মারা যায়।

সহিংসতা ও অশ্লীলতার বিষয়টিকে সেন্সর বোর্ডে যতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়, চলচ্চিত্রে তামাক বা সিগারেটের ব্যবহারের বিষয়টি সেভাবে দেখা হয় না বলে স্বীকার করেন সেন্সর বোর্ডের সদ্য বিদায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। অন্যদিকে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া দুটি চলচ্চিত্রে ধূমপানের দৃশ্যে সতর্কবার্তা প্রদানে নিয়ম মানা হয়নি, এই অভিযোগে উকিল নোটিশ পেয়েছেন বলে জানান বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মো. নিজামূল কবীর।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাটক, সিনেমায় ধূমপানের দৃশ্য তরুণদের কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়। এর ফলে তারা ধূমপানকে স্বাভাবিক অভ্যাস বলে মনে করে এবং এর স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি ভুলে যায়।

তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের বলেন, তরুণসমাজকে সুরক্ষা দিতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিষয়টি চলচ্চিত্রসহ সমাজের সব ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা দরকার।