বন্ধুত্ব পাতিয়ে কিশোরকে খুন

ফুটবল খেলা নিয়ে বিরোধের জেরে এক কিশোরকে খুনের পরিকল্পনা হয়। তা জেনে ফেলে ১৫ বছরের সিজান। পরে বন্ধুত্ব পাতিয়ে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয় কয়েকজন। সুযোগ বুঝে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয় সিজানকে।

কিশোর সিজান হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন দুই তরুণ ইমন (১৯) ও মুন্না মিয়া (১৮)। গত বুধবার ঢাকার আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার পর তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।

৭ মার্চ রাতে চকবাজার থানা এলাকার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পিঠে ছুরি মেরে সিজানকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সিজানের বাবা মুকুল মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে ১০ মার্চ চকবাজার থানায় খুনের মামলা করেন।

মুকুল মিয়া ভাঙারি ব্যবসা করেন। মা নাসরিন বেগম গৃহিণী। নাসরিন বেগম বলেন, তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। সিজান তাঁর একমাত্র ছেলে।

মামলাটি প্রথমে তদন্ত করছিল চকবাজার থানা। পরে সিজান হত্যার তদন্তভার পায় পিবিআই। ১১ মার্চ অভিযান চালিয়ে কক্সবাজার থেকে মামলার প্রধান আসামি ইমনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর মুন্না মিয়াকে বংশালের নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) উপপরিদর্শক আল আমিন শেখ গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর সিজানকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে। আদালতকে বিস্তারিত জানিয়েছে এই দুই আসামি। খুন করার পর বাসায় গিয়ে গান ছেড়ে তাঁরা সারা রাত উল্লাস করে।’

খুনের পর উল্লাস

সিজানের মা নাসরিন বেগম বলেন, কাজ শেষে ৭ মার্চ রাত আটটার দিকে বাসায় আসে তাঁর ছেলে। খাওয়াদাওয়া করে ঘুমানোর জন্য বিছানায় যায়। রাত সাড়ে ১১টার সময় সিজানের মুঠোফোনে কল আসে। সঙ্গে সঙ্গে বাসা থেকে বের হয়ে যায় সে। যাওয়ার আগে বলেছিল, বাসার সামনে যাচ্ছে, এক্ষুনি ফিরবে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে অজ্ঞাত নম্বর থেকে সিজানের বাবা মুকুল মিয়ার মুঠোফোন ফোন আসে। ওই লোকটি বলেছিলেন, সিজান ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন। তার রক্তের প্রয়োজন। রাত দুইটার দিকে সিজান হাসপাতালে মারা যায়।

পুলিশ কর্মকর্তা আল আমিন শেখ বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী ইমন সিজানের ঘাড়ে হাত দিয়ে হাঁটতে থাকে। ইমনের ইশারা পেয়ে পেছন থেকে এক খুনি প্রথমে সিজানের পিঠে ছুরিকাঘাত করে। বাঁচার জন্য দৌড় দিলে মুন্না লাথি মেরে তখন সিজানকে ফেলে দেয়। এরপর ইমনসহ ছয়জন সিজানকে উপর্যুপরি কুপিয়ে জখম করে ফেলে রেখে যায়। এরপর তারা একজনের বাসায় গিয়ে গান ছেড়ে উল্লাস করে। এর প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে।’

চকবাজার-বংশালে আটটি গ্রুপ

পুলিশ বলছে, মাস দেড়েক আগে ফুটবল খেলা নিয়ে দ্বন্দ্বের শুরু হয়। ইমনের গ্রুপের একজনকে হোসেন গ্রুপের লোকজন ছুরিকাঘাত করে। এরপর ইমন গ্রুপের লোকজন হোসেনকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। কিন্তু এই পরিকল্পনার কথা জেনে ফেলে সিজান। সে তা হোসেন গ্রুপকে জানিয়ে দেয়। পরে সিজানকে হত্যার পরিকল্পনা করে ইমন।

আদালতকে পিবিআই প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, বংশাল ও চকবাজার থানা এলাকার সুরিটোলা, মালিটোলা ও চানখাঁরপুল এলাকায় একাধিক সিনিয়র-জুনিয়র গ্রুপ আছে। একটি ইমন গ্রুপ-সমর্থিত, আরেকটি সিজান গ্রুপ-সমর্থিত। এলাকায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে গ্রুপ দুটির মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল।

পিবিআইয়ের আল আমিন শেখ প্রথম আলোকে বলেন, চকবাজার ও বংশাল এলাকায় সাত থেকে আটটি গ্রুপ আছে। প্রতিটি গ্রুপের সদস্য আছে ৩০ থেকে ৪০ জন। এরা এলাকার বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। সিজান হত্যাকাণ্ডে জড়িত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।