মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে উচ্ছেদচেষ্টা

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজবাড়ি বদিপুর গ্রামে এক মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদচেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গ্রাম্য পঞ্চায়েত এ জন্য প্রয়াত ওই মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী-সন্তানদের চাপ দিয়ে ব্যর্থ হওয়ায় তাঁদের ‘একঘরে’ ঘোষণা করেছে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, মগ্রামের ুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন ও তাঁর স্ত্রী ফাতেমা বেগম ১৯৯৩ সালে মাইজবাড়ি বদিপুর এলাকায় ১০ শতক খাসজমি বন্দোবস্ত পান। চার বছর আগে জয়নাল মারা যান। এরপর ওই জমিতে টিনের ছাপরা তুলে বাস করছেন ফাতেমা বেগম।

ফাতেমা বেগম জানান, তাঁর এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন, অন্যজন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। স্বামীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকায় সংসার ও মেয়ের লেখাপড়া চালান। ৫ মার্চ টিনের ছাপরাঘরে পাকা খুঁটি বসিয়ে সংস্কারের উদ্যোগ নিলে বদিপুর গ্রামের পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হয়। পঞ্চায়েতের দাবি, এটি মসজিদের জমি। তাঁরা এখান থেকে ঘর সরিয়ে নিতে চাপ দেন। বিষয়টি পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে পুলিশকে জানালে পুলিশ দুই পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে থানায় যেতে বলে। তিনি থানায় বন্দোবস্তের কাগজপত্র দেখান। কিন্তু পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে কোনো কাগজপত্র দেখানো হয়নি। এরপরও তাঁকে ঘর সরিয়ে নিতে চাপ দেওয়া হয়। তিনি তাতে কোনোভাবেই রাজি না হওয়ায় পঞ্চায়েতের লোকজন বৈঠক করে তাঁকে ‘একঘরে’ হিসেবে ঘোষণা দেয়।

ফাতেমা বেগমের ছোট ভাই জিয়াউর রহমান জানান, বদিপুর পাড়ায় তাঁর একটি মুদিদোকান রয়েছে। বোন ফাতেমা বেগমের পরিবারকে একঘরে হিসেবে ঘোষণার পর তাঁর দোকানেও কোনো লোকজন আসছে না।

ফাতেমা বেগম বলেন, ‘অসহায় মানুষ হিসেবে আমি পঞ্চায়েতের কাছে জোড় হাতে মিনতি করেছি। কিন্তু তারা আমার কথা শোনেননি। এখনো আমাকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমার চলাফেরায় অসুবিধা হচ্ছে। এটি যদি মসজিদের জমি হবে, তাহলে তিন বছর আগে যখন তিনি ছাপরাঘর তোলেন, তখন কেউ কোনো বাধা দেয়নি কেন?’

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, বদিপুর এলাকায় সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়ক ঘেঁষে পূর্ব পাশে বদিপুর গ্রামে মসজিদ। মসজিদের দক্ষিণে একটি পুকুর। পুকুরের পর রয়েছে খালি জায়গা। ওই খালি জায়গার পরে দক্ষিণে ফাতেমা বেগমের টিনের ছাপরাঘর। ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ফাতেমা বেগম বলেন, ‘এই জমি আর ঘর ছাড়া আমার কিছু নাই। আমার ঘর তুলে দিলে আমি মেয়েকে নিয়ে রাস্তায় থাকতে হবে।’

বদিপুর জামে মসজিদের মোতোয়ালি ও পঞ্চায়েতের মুরব্বি আহমদ আলী দাবি করেন, কোনো কাগজপত্র না থাকলেও এই জমি মসজিদের। এক পাশে ফাতেমা স্থায়ী ঘর করার উদ্যোগ নিলে তাঁকে নিষেধ করা হয়। তিনি বলেন, ‘যেহেতু ফাতেমা আমাদের কথা মানতে রাজি নয়, তাই আমরা বলেছি তুমি তোমার মতো চলো, আমরা আমাদের মতো চলব।’

সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল রানা বলেন, দুই পক্ষকেই থানায় ডাকা হয়েছিল। ফাতেমা বেগমের কাছে ৯৯ বছরের বন্দোবস্তের দলিল আছে। পরে পঞ্চায়েতের লোকজনকে বলা হয়েছে, তারা যেন এ নিয়ে আর কোনো ঝামেলা না করে।