দিনাজপুরে উদ্ধার স্ত্রী নীলগাইয়ের মৃত্যু

দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যানের মিনি চিড়িয়াখানায় স্ত্রী নীলগাইটি মারা গেছে। ছবি: সংগৃহীত
দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যানের মিনি চিড়িয়াখানায় স্ত্রী নীলগাইটি মারা গেছে। ছবি: সংগৃহীত

দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যানের মিনি চিড়িয়াখানায় স্ত্রী নীলগাইটি মারা গেছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বেড়ার সঙ্গে ধাক্কা লেগে এটি মারা যায়। এতে ওই চিড়িয়াখানায় থাকা পুরুষ নীলগাইটি সঙ্গিনী হারিয়ে একা হয়ে গেছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

রামসাগর জাতীয় উদ্যান সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ ইউনিয়নের যদুয়ার গ্রামের পাশে বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তে বয়ে যাওয়া কুলিক নদের ধারে স্ত্রী নীলগাইটিকে দেখতে পান স্থানীয় জেলেরা। পরে গ্রামবাসী মিলে একে আটক করেন। পরদিন বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় একে উদ্ধার করে দিনাজপুর রামসাগর জাতীয় উদ্যানে আনা হয়। এর আগে গত ২২ জানুয়ারি নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলায় ধরা পড়া পুরুষ নীলগাইটিকে রাজশাহীর বন্য প্রাণী উদ্ধার ও পুনর্বাসনকেন্দ্র থেকে দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যানের মিনি চিড়িয়াখানায় আনা হয়। উদ্যান কর্তৃপক্ষ দেশ থেকে বিলুপ্তপ্রায় নীলগাইয়ের প্রজননের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করে। কিন্তু এর আগেই স্ত্রী নীলগাইটি মারা গেছে।

রামসাগর জাতীয় উদ্যান সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যা সাতটায় পুরুষ নীলগাইটিসহ দৌড়ঝাঁপ করার সময় নেটের বেড়ার সঙ্গে প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা লেগে মাটিতে পড়ে যায় স্ত্রী নীলগাইটি। এতে বুকে আঘাত পেয়ে এটি অল্প সময়ের মধ্যে মারা যায়।

দিনাজপুর জেলা সামাজিক বন বিভাগের কর্মকর্তা ও রামসাগর জাতীয় উদ্যানের তত্ত্বাবধায়ক আবদুস সালাম বলেন, ‘নীলগাই দুটি উদ্ধার করে রামসাগর চিড়িয়াখানায় নিয়ে আসার পর পিতৃস্নেহ দিয়ে এদের আগলে রেখেছি। তাদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে কোথাও কোনো তথ্য পাচ্ছিলাম না। কলা, ছোলা, খড়সহ বেশ কিছু খাবার দিয়ে, নিয়মিত যত্ন নিয়ে তাদের দেখভাল করেছি। ভালোবেসে স্ত্রী নীলগাইটির নাম রেখেছিলাম নীলা। আর পুরুষটির নাম রেখেছি নীল। ফাল্গুন মাসের এই সময়টুকু মূলত এদের প্রজননের সময়।’

রামসাগর চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের নিয়মিত খাবার পরিবেশন করেন বাগানমালি জহুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘গত শনিবার বিকেলবেলায়ও নীলগাই দুটিকে ঠিকমতো খাবার খাইয়েছিলাম। স্ত্রী নীলগাইটির মৃত্যুর পরে পুরুষ নীলগাইটি ঠিকমতো খাবার খায় না, হাঁটাচলা করে না, কাছেও আসে না।’

রামসাগর জাতীয় উদ্যানের কর্মকর্তারা জানান, গত শনিবার রাতেই নীলগাইটির ময়নাতদন্ত হয়েছে। এই সময় দিনাজপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শাহীনুর ইসলাম, সদর উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন গোলাম কিবরিয়া ও হাবিপ্রবি ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন হারুন উর রশিদ উপস্থিত ছিলেন।

নীলগাইটি মারা যাওয়ার ঘটনায় দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি সায়েন্স অনুষদের ডিন হারুন উর রশিদ, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শাহীনুর ইসলাম ও সহকারী বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।