শিশুদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান

নতুন প্রজন্মের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বানে গতকাল রোববার বিভিন্ন জেলায় উদ্‌যাপিত হয়েছে তাঁর ৯৯তম জন্মবার্ষিকী। দিনটি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে উদ্‌যাপিত হয়। শোভাযাত্রা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আনন্দে দিনটি কাটিয়েছে শিশুরা।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে এবং শিশু সংগঠন খেলাঘরের সহযোগিতায় সিটি করপোরেশন এলাকার সব কটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে জানো’ শীর্ষক বইপড়া ও কুইজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল রচিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বইটি ২০ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে বিতরণ করা হয়। সেই বই পড়ে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হয়। এ ছাড়া সকালে নারায়ণগঞ্জ নগর ভবন প্রাঙ্গণে শিশু থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা হয়। এতে বিভিন্ন স্কুলের প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়।

বিকেলে শহরের জিমখানা শেখ রাসেল পার্কের মুক্তমঞ্চে বিজয়ী শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এই দেশ চলুক। ছোট বাচ্চারা যখন দেশের নেতৃত্বে আসবে, তারা যেন বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস জানে। লাখো মুক্তিযোদ্ধা, যাঁরা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, যুদ্ধ করে আহত হয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন, তাঁদের সম্পর্কে জানতে হবে।’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খেলাঘর আসর নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক, মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম। এদিকে জেলা প্রশাসন, প্রশাসন, জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন চাষাঢ়া বিজয়স্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে বিভিন্ন স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান, জেলা প্রশাসক দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার কাজী মোজাম্মেল হক, মুক্তিযোদ্ধা মহর আলী, ইমান উদ্দিন প্রমুখ। বিকেলে বঙ্গবন্ধু পরিষদ গাজীপুর শাখার উদ্যোগে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম।

মানিকগঞ্জে সকাল আটটার দিকে জেলা শহরের বিজয় মেলা মাঠ প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ। এরপর সেখান থেকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশসহ বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

সকাল ১০টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সভা শেষে শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটা এবং স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।

মুন্সিগঞ্জে গতকাল সকাল নয়টার দিকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে শোভাযাত্রা বের করে জেলা প্রশাসন। শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে গিয়ে এটি শেষ হয়। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিশুদের নিয়ে কেক কাটেন স্থানীয় সাংসদ, জেলা প্রশাসকসহ শিক্ষক ও অভিভাবকেরা। সেখানে শিশুদের অংশগ্রহণে আবৃত্তি হয়। পরে জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানার সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে আলোচনা সভা হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক সাংসদ মৃণাল কান্তি দাস।

নরসিংদীতে গতকাল সকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। পরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং শিশুদের নিয়ে ৯৯ পাউন্ডের কেক কাটেন জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংগঠন ‘মুক্ত আসর’ ঢাকার ধামরাইয়ে উপজেলা পরিষদে গতকাল ‘বাংলাদেশকে জানো’ নামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মুক্ত আসরের সভাপতি আবু সাঈদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা এ জেড এম সাদেকুর রহমান খান, পদ্মা রহমান, ভ্রমণকন্যা এলিজা বিনতে এলাহী, ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কালাম। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কুইজ ও রচনা প্রতিযোগিতায় সেরা ২১ শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় বই ও সনদ।

ঢাকার দোহার উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে শোভাযাত্রা বের করা হয়। উপজেলার প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় উপজেলা প্রাঙ্গণে এসে কেক কাটার মাধ্যমে শেষ হয় এটি। বেলা ১১টায় নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে নবাবগঞ্জ বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের মাঠে কেক কাটা, শোভাযাত্রা, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।