সড়ক প্রশস্ত হয়েছে দলীয় কার্যালয় সরেনি

মীরবাগে জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যালয় না সরিয়েই সড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে। মীরবাগ–মধুবাগ সংযোগ সড়ক থেকে তোলা।  ছবি: প্রথম আলো
মীরবাগে জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যালয় না সরিয়েই সড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে। মীরবাগ–মধুবাগ সংযোগ সড়ক থেকে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

রামপুরা ডিআইটি থেকে মধুবাগ ঝিলপাড় পর্যন্ত সড়কটি সংস্কার ও চওড়া করা হয় গত বছরের শেষের দিকে। এই কাজের অংশ হিসেবে রাস্তার দুই পাশের বাড়ির মালিক ও দোকানিদের কয়েক ফুট করে জায়গা ছাড়তে হয়েছে। কিন্তু আগের মতোই বহাল আছে শ্রমিক লীগের কার্যালয়।
মীরবাগ চৌরাস্তা থেকে মধুবাগ ঝিলপাড় পর্যন্ত প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার সড়ক পশ্চিম রামপুরা নতুন রাস্তা হিসেবে পরিচিত।
হাতিরঝিলে যাওয়ার জন্য গাড়িগুলো রামপুরার ডিআইটি থেকে এ পথে যাতায়াত করে। সড়কটির মীরবাগ অংশে শ্রমিক লীগের কার্যালয়। দক্ষিণে খানিকটা পথ পেরোতেই ফুটপাতে শ্রমিক লীগের আরেকটি কার্যালয় চোখে পড়ে।
দুটি কার্যালয়ের সামনেই ব্যানারে মো. জাহাঙ্গীর আলমের ছবি। তিনি শ্রমিক লীগের রমনা থানার সাবেক সভাপতি এবং ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক।
গতকাল রোববার মীরবাগে গিয়ে দেখা যায়, টিনের তৈরি কার্যালয়টি তালাবদ্ধ। স্থানীয় লোকজন বলেন, জাহাঙ্গীর আলম সন্ধ্যার পর তাঁর অনুসারীদের নিয়ে এই কার্যালয়ে বসেন।
স্থানীয় লোকজন বলেন, আগে সড়কটি ১৮ থেকে ২২ ফুট চওড়া ছিল। বিভিন্ন অংশ ভাঙাচোরা ছিল। গত বছরের মাঝামাঝিতে সংস্কার ও প্রশস্ত করার কাজ শুরু হয়। সড়টি ৩০ ফুট প্রশস্ত করার পরিকল্পনা হয়।
বেশির ভাগ বাড়ির মালিক ও দোকানি কয়েক ফুট জায়গা রাস্তার জন্য ছেড়েছেন। তবে শ্রমিক লীগের কার্যালয় আর সরেনি।
এলাকার বাসিন্দা ও একটি দোকানের মালিক বলেন, শ্রমিক লীগের কার্যালয়টি যে জায়গায় ছিল, সেখানেই আছে। তবে আগে সেখানে কোনো সাইনবোর্ড ছিল না। এখন সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘গত বছরে শ্রমিক লীগের কার্যালয়ে অপ্রীতিকর কিছু ঘটেছিল বলে জানা যায়। এরপর বেশ কিছুদিন সেটি বন্ধ ছিল। পরে আবার লোকজন বসতে শুরু করেছে।’
মীরবাগের এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সড়কের পুরোটাই ৩০ ফুট চওড়া হওয়ার কথা। কিন্তু এলাকায় যাঁরা তুলনামূলক বেশি প্রভাবশালী, তাঁরা কম জায়গা ছেড়েছেন। তাই সব অংশে রাস্তা ৩০ ফুট হয়নি। আবার দলীয় কার্যালয়ও সড়কের মধ্যে পড়েছে। তবে তা উচ্ছেদ করা হয়নি।
গত বছর সড়কটি সংস্কার করেছে ডিএনসিসির প্রকৌশল বিভাগ। ডিএনসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী (অঞ্চল–৩) খন্দকার মাহাবুব আলম বলেন, তবে সড়কের ওপর কোনো স্থাপনা থাকলে তা সরানোর দায়িত্ব সম্পত্তি বিভাগের, প্রকৌশল বিভাগের নয়।
রাস্তার ওপর থেকে দলীয় কার্যালয় সরানোর বিষয়ে বক্তব্য জানতে গতকাল ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
রমনা থানার ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সামছুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মীরবাগে রাস্তার ওপর শ্রমিক লীগের একটি কার্যালয় আছে জানি। জাহাঙ্গীর আলম নিজের টাকায় এটি তৈরি করেছেন। আগে এটি আরও রাস্তার দিকে ছিল। এখন তা কিছু ভেতরের দিকে নেওয়া হয়েছে। এই কার্যালয়টি সিটি করপোরেশনের জায়গায় তৈরি করা হয়েছে। এটাকে বৈধ বলা যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, এই রাস্তা ডিএনসিসির ৩০ ফুট করার কথা। তা করা হয়নি। অনেকে জায়গা ছাড়েনি। সামনের দিনে তা করা হতে পারে। এই কার্যালয়টি যদি ডিএনসিসি সরিয়ে ফেলে, তাহলে শ্রমিক লীগ বাধা দিতে পারে না।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তাঁকে এলাকায় পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৈমুর রেজার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তা বন্ধ পাওয়া যায়।