মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা তুলে ধরুন

মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান নিয়ে বিদ্যাপীঠ বৈঠকিতে (বঁা থেকে­) সাইয়েদা কামাল, মিনু বিল্লাহ, সুলতানা কামাল, আসমা নিসার, রেশমা আমিন ও খুকু আহমেদ।  ছবি: প্রথম আলো
মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান নিয়ে বিদ্যাপীঠ বৈঠকিতে (বঁা থেকে­) সাইয়েদা কামাল, মিনু বিল্লাহ, সুলতানা কামাল, আসমা নিসার, রেশমা আমিন ও খুকু আহমেদ। ছবি: প্রথম আলো

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বয়ানে নারীর ভূমিকাকে কেবল নির্যাতিত হওয়া নয়, যুদ্ধে নারীরা সরাসরি অংশ নিয়েছেন, প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং শহীদ হয়েছেন—এসব সার্বিক ঘটনা লিপিবদ্ধ করতে হবে। এ জন্য তরুণ গবেষক, লেখক, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলা একাডেমির এগিয়ে আসা দরকার বলে মনে করেন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া নারীরা।
গতকাল সোমবার ভারতের আগরতলার বিশ্রামগঞ্জে ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল’-এ যুদ্ধাহতদের সেবাদানকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ছয়জন নারী মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিচারণার ঘটনা নিয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধে নারী: বাংলাদেশ হাসপাতাল, বিশ্রামগঞ্জ, ১৯৭১’ -নামের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ধানমন্ডির জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বিদ্যাপীঠ বৈঠকি-৩’ এর অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুলতানা কামাল, সাইয়েদা কামাল, মিনু বিল্লাহ, খুকু আহমেদ, রেশমা আমিন ও আসমা নিসার।
মানবাধিকারকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধা সুলতানা কামাল মুক্তিযুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণের বিষয়ে স্মরণ করে বলেন, স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও মুক্তিযুদ্ধে নারীদের অবদান যথাযথভাবে স্বীকৃত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে নারীর প্রত্যক্ষ অংশ নেওয়ার ঘটনা প্রতিষ্ঠা করার জন্য এখনো আলাদা করে বলতে হয়, লড়াই করতে হয়।
স্মৃতিচারণাকালে এই নারী মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে আহত বা অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য চিকিৎসক মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মবিন ও গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশ হাসপাতাল’ স্থাপন করা হয়। এটি ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল’ বা ‘বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতাল’ নামেও পরিচিত ছিল। এ হাসপাতাল প্রথমে স্থাপিত হয় সীমান্তসংলগ্ন ভারতের সোনামুড়ায়। পরে নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তা আগরতলার বিশ্রামগঞ্জে স্থানান্তর করা হয়। সে সময় আখতার, সিতারা বেগমসহ বেশ কয়েকজন চিকিৎসক থাকলেও যুদ্ধকালীন এই হাসপাতালের মূল জনবল ছিলেন নার্স বা সেবিকারা। যুদ্ধের আগে তাঁদের অনেকেই ছিলেন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় হাসপাতালে সেবাদানের জন্য সেখানেই স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় কাজ করেন।
এই নারী মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, চারদিকে বাঁশের বেড়া, মাটির ভিত এবং বাঁশের চারটি খুঁটির ওপর মাচা বেঁধে বিছানা নিয়ে ছিল হাসপাতালের অবকাঠামো। বেশির ভাগ সময় দিনের বেলাতেই অপারেশন করতে হতো। রাতে জরুরি হলে হারিকেন বা টর্চলাইট জ্বালিয়ে অপারেশন হতো। শেষ দিকে জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয়। তবু দেশপ্রেম, নিরলস পরিশ্রম এবং আত্মনিবেদনের কারণে এই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কোনো আহত ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেননি। এসব নারী চিকিৎসা উপকরণের অপ্রতুলতা, স্বল্প প্রশিক্ষণ নিয়েও দিনরাত অকাতরে সেবা করে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্থ করে তুলেছেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আহরার আহমদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধের গান গেয়ে শোনান ফেরদৌসী রহমান।