উত্তরায় ভাঙা হলো বহুতল ভবন

রাজউকের অভিযানে অনুমোদনহীন একটি ভবন ভেঙে ফেলা হয়। গতকাল উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরে।
রাজউকের অভিযানে অনুমোদনহীন একটি ভবন ভেঙে ফেলা হয়। গতকাল উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরে।

উত্তরায় গতকাল দুটি পৃথক উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃপক্ষ। রাজউকের অভিযানে উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরের একটি অবৈধ ভবন ভাঙা হয়। আর ডিএনসিসির অভিযানে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের শায়েস্তা খাঁ সড়কের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।

ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ার ও রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তারের নেতৃত্বে এই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হয়।

গতকাল সোমবার রাজউকের উচ্ছেদ অভিযানে বেলা তিনটা থেকে উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরের ৯/বি সড়কের ৩৩ নম্বর প্লটে নির্মিত তিনতলা ভবন ভাঙার কাজ শুরু হয়। ভবনটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা ভেঙে ফেলা হয়েছে। ওই এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও তা অমান্য করে ওই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল বলে জানায় রাজউক কর্তৃপক্ষ।

রাজউক উত্তরা অঞ্চলের অথরাইজড কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, প্লটটি শাহীন স্কুলের মালিক মাসুদুল আমীন শাহীনের স্ত্রী রোমেনা আক্তারের নামে। তাঁরা সিভিল এভিয়েশনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অবৈধভাবে ওই প্লটে বহুতল ভবন নির্মাণ করেন। পরে রাজউক কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদের নোটিশ দেওয়ায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই ওই ভবনে শাহীন স্কুল অ্যান্ড ক্যাডেট একাডেমির কার্যক্রম শুরু করে দেন। প্রকৃতপক্ষে উচ্ছেদ ঠেকাতে কৌশলে স্কুলের শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের তাঁরা তাঁদের অবৈধ কাজের ঢাল হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করছিলেন। 

রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার বলেন, সিভিল এভিয়েশনের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও রাজউকের অনুমতি ছাড়া এই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। তাই এই ভবনটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আজকে (গতকাল) আমাদের পক্ষে যতটুকু ভাঙা সম্ভব সেই পরিমাণ ভাঙা হবে। বাকিটুকু ভাঙার জন্য ১০ দিনের সময় দিয়ে লিখিত নেওয়া হবে। এই সময়ের মধ্যে তাঁরা নিজ দায়িত্বে ভবন না ভাঙলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, ওই ভবনে শাহীন স্কুলের কার্যক্রম চালু করলেও ভবন নির্মাণের অধিকাংশ কাজই শেষ করা হয়নি। ওই ভবনের শিশুশিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হলেও ওঠানামার সিঁড়িতে কোনো রেলিং নেই, সিঁড়ি প্লাস্টার করা হয়নি, বিদ্যুতের সংযোগ নেই, বৈদুতিক পাখা-বাতি কিছু নেই। শ্রেণিকক্ষের দরজাগুলোও লাগানো হয়নি। পানি ও গ্যাসের সংযোগও নেই। নিচতলায় দুটি শৌচাগারও
তড়িঘড়ি করে মেরামত করা হয়েছে কয়েক দিন আগেই। ছাদ উন্মুক্ত, নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই। উচ্ছেদের হাত থেকে ভবন বাঁচাতে এরকম অসম্পূর্ণ একটি পরিবেশে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছিল শাহীন স্কুল অ্যান্ড ক্যাডেট একাডেমি কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে শাহীন স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অন্যদিকে ডিএনসিসির উচ্ছেদ অভিযান সকাল ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত চলে। এ সময় শায়েস্তা খাঁ সড়কের কসাইবাড়ি থেকে স্লুইচগেট পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পানিনিষ্কাশন নালার ওপর এবং নালার দুই পাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। অবৈধভাবে নির্মিত দেড় শতাধিক কাঁচা ও সেমি পাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।
ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজিদ আনোয়ার বলেন, এই অঞ্চলের জলাবদ্ধতা দূরীকরণের অংশ হিসেবে এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে ডিএনসিসির নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম ১২ মার্চ ওই এলাকা পরিদর্শন করেন এবং সেখানে থাকা অবৈধ স্থাপনা দুই দিনের মধ্যে অপসারণের সময় দিয়েছিলেন। অভিযানে প্রায় ২৫ হাজার বর্গফুট এলাকা দখলমুক্ত হয়েছে বলেও জানান এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।