পাঁচ বছরেও সংস্কার হয়নি রূপসী-কাঞ্চন সড়ক

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রূপসী-কাঞ্চন সড়ক বেহাল। সম্প্রতি মুড়াপাড়া বাজার এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের রূপসী-কাঞ্চন সড়ক বেহাল। সম্প্রতি মুড়াপাড়া বাজার এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

প্রায় ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির পুরো অংশেই বড় বড় গর্ত। পিচ উঠে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে ধুলাময় সড়কটি সামান্য বৃষ্টিতেই এঁদো ডোবায় পরিণত হয়। গত পাঁচ বছরে বড় কোনো সংস্কারকাজ না হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের রূপসী থেকে কাঞ্চন পর্যন্ত এই সড়ক এখন দুর্ভোগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত ১০ মার্চ সরেজমিনে দেখা যায়, রূপসী বকুল চত্বর থেকে কাঞ্চন মায়ার বাড়ি এলাকা পর্যন্ত সড়কটি খানাখন্দে ভরা। এবড়োখেবড়ো সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে পণ্যবাহী ট্রাকসহ নানান যানবাহন। ধুলায় ধূসর সড়কটিতে নাকে–মুখে রুমাল চেপে চলতে হয় পথচারীদের। ধুলা থেকে বাঁচতে অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে সড়কে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছেন। কয়েকজন পথচারীর সঙ্গে কথা হলে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বছরের পর বছর এমন অবস্থা চললেও জনপ্রতিনিধিরা কিছুই করছেন না। কালেভদ্রে মেরামতের নামে গর্ত ভরাট করা হয়। তবে মাস না পেরোতেই ফিরে আসে আগের চিত্র। ফলে বছরজুড়ে ধুলা আর কাদার অত্যাচারের সঙ্গে দুর্ঘটনা এবং যানজটের শিকার হতে হয় পথচারীদের।

১৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ও সাড়ে ৫ মিটার প্রস্থের সড়কটির দুই পাশে গড়ে উঠেছে ৩০টিরও বেশি ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এ ছাড়া সরকারি মুড়াপাড়া কলেজ, গন্ধবপুর উচ্চবিদ্যালয়, রূপসী নিউ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হাটাব আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়সহ ১৫টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের চলাচল এই সড়ক ধরে। মুড়াপাড়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহ আলম বলেন, বিদ্যালয়ে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও শুধু বেহাল সড়কের কারণে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে চায় না। স্থানীয় একটি পেপার মিলের ট্রাকচালক জমির উদ্দিন জানান, সড়কের গর্তের কারণে কিছুদিন আগে একটি কাগজবোঝাই ট্রাক উল্টে যায়। তা ছাড়া গর্তে ট্রাক বা অন্য কোনো যান আটকে গেলে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

মুড়াপাড়া বাজারে কথা হয় ষাটোর্ধ্ব ভ্যানচালক আমজাদ মিয়ার সঙ্গে। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি জানান, বেহাল সড়কের কারণে শ্রম বাড়লেও উপার্জন কমেছে তাঁর। তিন বছর আগে ভ্যান উল্টে ডান পা ভেঙে যায় তাঁর। সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মতিয়ার রহমান ও জয়নাল আবেদিন বলেন, খারাপ রাস্তায় চলাচলের সময় গাড়ির বেশি ক্ষতি হয়। ফলে ভাড়া বেশি নিতে হয়। এখন (শুষ্ক মৌসুমে) চলাচল করা গেলেও বর্ষায় গাড়ি (সিএনজি) বের করা যায় না।

মুড়াপাড়া কলেজের এক শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিদিন লাখো মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। সড়কটি সংস্কারের দাবিতে আমরা বেশ কয়েকবার মানববন্ধন করেছি, সড়কে ধানের চারা লাগিয়ে প্রতিবাদ করা হয়েছে। তাতেও কাজ হয়নি। ফলে মানুষ যেমন কষ্ট পাচ্ছে, তেমনি এই এলাকায় প্রত্যাশিত শিল্পায়ন হচ্ছে না।’

এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৭ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ হিসেবে নির্মিত হলেও পরবর্তী সময়ে এটি এলজিইডির সড়ক হিসেবে অধিভুক্ত হয়। ২০১৪ সালের পর সড়কটির সংস্কার না হলেও সাম্প্রতিক সময়ে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে ঠিক কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে সেটা জানেন না রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী এনায়েত হোসেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, প্রকল্পটি এডিবির অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অনুমোদন পেলে সেটার দরপত্রপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

পাঁচ বছরেও কেন সড়কটি সংস্কার হয়নি জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান ভূঁইয়া বলেন, ‘সড়কটির মাটি ভালো না। সংস্কার করলেও বেশি দিন টেকে না। সড়কের আশপাশে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানাগুলোর বড় বড় ট্রাক চলাচলের কারণে সড়কটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্ষার আগেই সংস্কার করে সড়কটিকে চলাচলের উপযোগী করে তুলব।’