স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের ৪৮তম বার্ষিকী আজ

আজ ঐতিহাসিক ১৯ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে গাজীপুরের মানুষ সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। গাজীপুরবাসী মার্চের সেই অবিস্মরণীয় গণ-অভ্যুত্থানের কথা সশ্রদ্ধ স্মরণ করছে।

১৯ মার্চ স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের ৪৮তম বার্ষিকী আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে জয়দেবপুরে (গাজীপুর) ভাওয়াল রাজবাড়িতে তৎকালীন সেনানিবাসে দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্র করার উদ্দেশ্যে ব্রিগেড কমান্ডার জাহানজেবের নেতৃত্বে পাঞ্জাব রেজিমেন্টের একদল সেনা জয়দেবপুর সেনানিবাসে যাবে—এ খবরে জয়দেবপুরের সর্বস্তরের মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা রাস্তার বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড দেয়। তখন জয়দেবপুর সেনানিবাসের অধিনায়ক ছিলেন লে. কর্নেল মাসুদ, সহ–অধিনায়ক ছিলেন মেজর কে এম সফিউল্লাহ। গাজীপুরের রাজনৈতিক নেতা (সাবেক মন্ত্রী) মরহুম শামসুল হক পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে চূড়ান্ত যুদ্ধ হলেও এর আগেই ১৯ মার্চ গাজীপুর তথা জয়দেবপুরের মাটিতেই সূচিত হয়েছিল দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতাকামী বীর বাঙালির প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ।

স্বাধীনতাযুদ্ধের পর এই দিবস স্মরণীয় করে রাখতে তৎকালীন ১৬ বেঙ্গল রেজিমেন্টের উদ্যোগে ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-গাজীপুর সড়কের সংযোগস্থল চান্দনা চৌরাস্তায় মুক্তিযোদ্ধার প্রতীক (এক হাতে রাইফেল, অন্য হাতে গ্রেনেড) মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’ নির্মাণ করা হয়। দিবসটি উদ্‌যাপন উপলক্ষে গাজীপুর জেলা প্রশাসন, আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন ও শহীদ হুরমত স্মৃতি সংসদ দিনব্যাপী কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে।

গাজীপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার কাজী মোজাম্মেল হক জানান, বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতাকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সাবেক সংসদ সদস্য (মরহুম) হাবিব উল্লাহর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি হাইকমান্ড এবং বর্তমান মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যের একটি অ্যাকশন কমিটি গঠন করা হয়। ছাত্র-শ্রমিক-জনতা পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে চান্দনা চৌরাস্তা থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তায় বহুসংখ্যক ব্যারিকেড তৈরি করে। পাকিস্তানি বাহিনী চান্দনা চৌরাস্তায় এসে অস্ত্রের মুখে ব্যারিকেড সরিয়ে সেনানিবাসে ঢুকলে ছাত্রজনতা রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়। ছাত্রজনতা জয়দেবপুর লেভেল ক্রসিংয়ে ওয়াগন ফেলে বন্দুক ও বাঁশের লাঠি নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

সেনানিবাস থেকে ফেরার পথে জয়দেবপুর লেভেল ক্রসিংয়ে পাকিস্তানি বাহিনী হাজির হলেই বীরদের বন্দুক গর্জে ওঠে। পাকিস্তানি বাহিনীর প্রতি কাজী আজিম উদ্দিন আহমেদ (মরহুম) নিজ বন্দুক দিয়ে প্রথম গুলিবর্ষণ করেন। ওই সময় পাকিস্তানি সেনারা পাল্টা গুলিবর্ষণ করলে নিয়ামত, মনু খলিফা শহীদ হন এবং চিকিৎসক ইউসুফ আলী সরকার, শাহজাহান, সন্তোষসহ বহু লোক আহত হন।

জয়দেবপুর থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড থাকায় পাকিস্তানি সেনারা হেঁটে চান্দনা চৌরাস্তায় গেলে আবদুস সাত্তার মিয়ার নেতৃত্বে প্রতিরোধের মুখে তারা এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। এতে হুরমত আলী শহীদ হন এবং কানু মিয়াসহ অনেকে আহত হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরে মারা যান।