এ মেয়াদে মূল কাজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তৃণমূলে ছড়িয়ে দেওয়া

আ ক ম মোজাম্মেল হক
আ ক ম মোজাম্মেল হক
>

দ্বিতীয়বার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন আ ক ম মোজাম্মেল হক। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নসহ নিজের কাজের অগ্রাধিকার ও চ্যালেঞ্জ বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। ৯ মার্চ এ বিষয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম।

প্রথম আলো: দ্বিতীয়বারের মতো মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর আপনার অগ্রাধিকার কী? সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ দেখতে পাচ্ছেন?

আ ক ম মোজাম্মেল হক: এই মেয়াদে আমাদের মূল কাজ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দেশের তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়া। এ ছাড়া পাঠ্যসূচিতে মুক্তিযুদ্ধের বিষয় ও যুদ্ধাপরাধীদের বিবরণ অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বিসিএস পরীক্ষায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের ওপরে ১০০ নম্বরের প্রশ্ন রাখা হবে। আর মুক্তিযোদ্ধাদের সচ্ছলতা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমাদের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে একটি প্রকৃত ও সঠিক মুক্তিযোদ্ধা তালিকা করা, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করা এবং মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখসমরের স্থান ও বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ করা।

প্রথম আলো: মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বা তাঁদের সুযোগ–সুবিধা আরও বাড়বে কি?

আ ক ম মোজাম্মেল হক: দেখুন, সরকার ইতিমধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের ৮০ ভাগ দাবি পূরণ করেছে। ভবিষ্যতে মুক্তিযোদ্ধাদের বাকি ২০ ভাগ চাহিদাও পূরণ করবে। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা আরেকটু সম্মানজনক হারে বাড়ানোর জন্য আমরা কাজ করছি। এ ছাড়া স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসের ভাতা ১০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব আমরা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য শিগগিরই পাঠাব। মুক্তিযোদ্ধাদের পাকা বাড়ি তৈরি করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকার অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি করে বাড়ি নির্মাণ করে দেবে। এ ছাড়া অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের বিনা মূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেবে সরকার।

প্রথম আলো: মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার কাজ কত দূর এগোল?

আ ক ম মোজাম্মেল হক: মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় যাচাই-বাছাই করে তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। ওই সব তালিকা পর্যালোচনা করে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে। আসলে উপজেলাভিত্তিক যাচাই-বাছাইয়ের জন্য নীতিমালা করা হয়েছিল। তবে দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, কিছু উপজেলায় যথাযথভাবে হলেও অধিকাংশ উপজেলায় সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই হয়নি।

প্রথম আলো: ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করা হলেও শাস্তি হয় না কেন? এখনো কি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা পাওয়া যাচ্ছে?

আ ক ম মোজাম্মেল হক: আমরা সব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করতে পারিনি বা ভুয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারিনি। এটি একটি চলমান কাজ। এ পর্যন্ত তিন হাজার চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে নিশ্চিত করে বলতে পারি, আমার মেয়াদে মুক্তিযুদ্ধ না করে কেউ মুক্তিযোদ্ধা হয়নি।

প্রথম আলো: ঘৃণাস্তম্ভ করার কথা বলছেন আপনি, এটা কেন?

আ ক ম মোজাম্মেল হক: স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় যারা প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরোধিতা করেছে, সেই সব স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘৃণা প্রকাশের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় একটি ঘৃণাস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তরুণ প্রজন্মকে জানাতে এই ঘৃণাস্তম্ভ।

প্রথম আলো: আপনারা বারবার বলে আসছেন রাজাকারের তালিকা করবেন? এর অগ্রগতি কত দূর?

আ ক ম মোজাম্মেল হক: ১৯৭১ সালে আলবদর, আলশামস, রাজাকাররা পাকিস্তানি বাহিনীকে সক্রিয় সহযোগিতা করেছিল। এসব যুদ্ধাপরাধীর একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ছিল। কিন্তু ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তালিকাটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ফলে সেই তালিকা প্রস্তুত করতে সময় নিতে হচ্ছে। আমরা ইতিমধ্যে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি। তাদের কাছে যে তালিকা রয়েছে, তা সংরক্ষণ ও মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দিতে বলা হয়েছে।

প্রথম আলো: মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় এ পর্যন্ত কতজনকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে? আরও দেওয়া কবে কি?

আ ক ম মোজাম্মেল হক: ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ ৩৩৯ বিদেশি নাগরিককে বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা ও বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও ১ হাজার ৭০০ জন বিদেশিকে স্বীকৃতি ও সম্মাননা দেওয়া হবে।

প্রথম আলো: আপনি কি নিজেকে সফল মনে করেন?

আ ক ম মোজাম্মেল হক: দেখুন, আমাদের সফলতা যেমন আছে, তেমনি কিছু ব্যর্থতাও আছে। আমরা এখন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে কার কী ভূমিকা ছিল, কে, কী ধরনের ষড়যন্ত্র করেছে, সেসব বিষয় তুলে ধরতে পারিনি। এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি, আশা রাখি সফল হব।