সড়কজুড়ে এলোমেলো রিকশা

একদিকে ঝুঁকি নিয়ে রিকশায় করে নেওয়া হচ্ছে রোগী, তার পাশেই ব্যস্ত সড়কের মাঝখানে চলন্ত বাসে তোলা হচ্ছে যাত্রী। গতকাল দুপুরে মিরপুর রোডের সায়েন্স ল্যাব এলাকায়।  ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
একদিকে ঝুঁকি নিয়ে রিকশায় করে নেওয়া হচ্ছে রোগী, তার পাশেই ব্যস্ত সড়কের মাঝখানে চলন্ত বাসে তোলা হচ্ছে যাত্রী। গতকাল দুপুরে মিরপুর রোডের সায়েন্স ল্যাব এলাকায়। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

মহাখালী থেকে ছাগল ও ভেড়ার চামড়া নিয়ে পুরান ঢাকার পোস্তায় যাচ্ছিলেন রিকশাচালক আবদুস সালাম। তাঁর সঙ্গে দেখা হলো মিরপুর সড়কের রাসেল স্কয়ার এলাকায় বেলা ৩টার দিকে। অথচ পুলিশ বলছে মিরপুর সড়কে রিকশা চলাচল নিষেধ।

ছয় মাসের মধ্যে রাজধানীতে তৃতীয় দফায় শুরু হয়েছে ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা সপ্তাহ’। এর মধ্যেই চলছে রিকশার এলোমেলো চলাচল। সরেজমিনে দেখা গেছে, পুলিশ বাস, মোটরসাইকেলসহ যান্ত্রিক যানবাহনগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে মামলা, জরিমানাসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। এমনকি পথচলতি মানুষকে আটকে পদচারী সেতু দিয়ে হেঁটে যেতে বলা হচ্ছে। কিন্তু রিকশার বিষয়ে পুলিশ একরকম কিছুই করছে না। যার ফলে রাজধানীর মিরপুর সড়কসহ ‘ভিআইপি’ পরিচিত সড়কগুলোতেও এখন রিকশা চলছে এলোমেলোভাবে। রাস্তার উল্টো পথেও হরহামেশাই চলছে তিন চাকার এই ধীরগতির বাহনগুলো। বাসচালকেরা বলছেন, রিকশার কারণে তাঁদের গতি কমছে।

এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে মাসভর বিশেষ ট্রাফিক অভিযানেও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। এরপর গত ১৫ জানুয়ারি রাজধানীতে আবার শুরু হয় ১৫ দিনের ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ-২০১৯’। এর দেড় মাসের মাথায় রোববার থেকে আবারও শুরু হয়েছে ট্রাফিক শৃঙ্খলা সপ্তাহ। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীতে মেট্রোরেলের কাজের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সংকীর্ণ হওয়ায় যান চলাচল ব্যহত হচ্ছে। পুলিশ ওই সব পথের অনেকগুলো বাসকে বিকল্প পথে ঘুরিয়ে দিয়েছে। আর ঢাকাকে চলনসই রাখতেই দফায় দফায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে।

তবে গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, মিরপুর সড়ক, রোকেয়া সরণি থেকে শুরু করে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউর মতো সড়কগুলোতেও রিকশা চলছে। শাহবাগ থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত সড়কটির অর্ধেকের মতো জায়গাজুড়ে মেট্রোরেলের কাজ চলছে। যান
চলাচলের জায়গা কমেছে অনেকখানি, এর মধ্যেই রিকশা ও ভ্যান চলছে। একই কারণে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে উড়োজাহাজ ক্রসিং পর্যন্ত সড়কটিতেও যান চলাচলের জায়গা আগের চেয়ে অর্ধেকের বেশি কমেছে। ওই সড়কে দেদার রিকশা চলছে। ওই রাস্তায় দায়িত্ব পালনকারী সার্জেন্ট ও পুলিশ সদস্যরা জানান, এই সড়কে রিকশা চলায় কোনো বিধিনিষেধ নেই।

এসব সড়কে মেট্রোরেলের কারণে যান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় যানবাহনের চাপ বেড়েছে মিরপুর সড়কে। কিন্তু সেখানেও রিকশা চলছে দেদার। গতকাল দুপুরে মিরপুর সড়কের শ্যামলী শিশুমেলার সামনে কয়েকটি রিকশার জটলা দেখা যায়। সেখানে কথা হয় তরুণ রিকশাচালক আজাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, শ্যামলী থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত রিকশাভাড়া এক থেকে দেড় শ টাকা। হরহামেশাই তাঁরা নিউমার্কেটের ভাড়া নিয়ে যান। তবে মাঝেমধ্যে পুলিশ ঝামেলা করে। আনসার বা পুলিশ সদস্য ধরলে হাতে কিছু গুঁজে দিলেই হলো। আর সার্জেন্ট ধরলে ১ হাজার ৮৫০ টাকা জরিমানা।

এই পথে চলাচলকারী ডি লিংক পরিবহনের বাসের চালক হাবিবুর রহমান বলেন, মধ্যে কয়েক বছর এই সড়কে কোনো রিকশা ছিল না। কিন্তু এখন এত রিকশা চলে যে কখনো কখনো তারা রাস্তার মাঝখানে চলে আসে। উল্টো পথেও রিকশা চলছে। আবার বাসের সঙ্গে রিকশার ঘষা লাগলে বাসচালকের ঘাড়েই দোষ পড়ে।

একদিকে ফুটপাত হকারদের দখলে, অন্যদিকে সড়কে যত্রযত্র চলছে রিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন। এসব কারণ নিউমার্কেট এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। গতকালের চিত্র।  ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
একদিকে ফুটপাত হকারদের দখলে, অন্যদিকে সড়কে যত্রযত্র চলছে রিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন। এসব কারণ নিউমার্কেট এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। গতকালের চিত্র। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

উবারের কারচালক আশরাফ আলী বলেন, শহরের একটা অংশে রিকশার যন্ত্রণা মারাত্মক বেড়েছে। দেড় মাস আগে মিরপুর এলাকায় তাঁর গাড়ির বাঁ পাশে রিকশার চাকার বল্টু দিয়ে লম্বা দাগ পড়ে যায়। মার্চের প্রথম সপ্তাহে গাউসিয়া মার্কেটের সামনে রিকশার একই বল্টু দিয়ে সামনের চাকাটা এমনভাবে ফুটো হয়ে গেছে যে আর মেরামত করা যায়নি। পাঁচ হাজার টাকায় নতুন চাকা কিনতে হয়েছে।

গণভবনের সামনে দিয়ে রিকশায় চড়ে যাচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সিয়াম আহমেদ। তিনি বলেন, গরমে বাসে উঠতে ভালো লাগে না, তাই কল্যাণপুর থেকে রিকশায় করে কলাবাগান যাচ্ছেন।

কলাবাগান এলাকায় দায়িত্বপালনকারী একজন সার্জেন্ট বলেন, রিকশাগুলোর বিরুদ্ধে তো মামলা করা যায় না। ওগুলো আটকালেই চালকেরা হাতে–পায়ে ধরা শুরু করেন। তাঁদের সামলানো খুবই কঠিন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রিকশা যেন সড়কগুলোতে না ওঠে, সে জন্য পুলিশ তৎপর। তারপরও কিছু রিকশা এই সড়কগুলোতে দেখা যাচ্ছে।

ডিএমপির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, মিরপুর সড়কে কোনো ভালো বাস না থাকার কারণে জনসাধারণের সুবিধার্থে রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি শিথিল করা হয়েছে। ওই সব সড়কে ভালো বাস নামলেই রিকশা তুলে নির্দিষ্ট ব্লকের ভেতরেই সীমাবদ্ধ রাখা হবে। পুরো ঢাকাকে ৬০টি ব্লকে ভাগ করে রিকশা চলাচলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যেমন গুলশান, বনানী বা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় চলাচলকারী রিকশাগুলো তাদের নির্দিষ্ট ব্লকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। কোনোভাবেই মূল সড়কে উঠতে পারবে না। তবে তার জন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে বলে তিনি জানান।