খালেদা জিয়া অসুস্থ, আদালতে আসার আগে বমি করেছেন: ফখরুল

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। আদালতে আসার আগে বমি করেছেন। মাথা সোজা রাখতে পারছেন না।

পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারে স্থাপিত বিশেষ আদালতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলে আজ মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার অভিযোগ করে বলেন, অসুস্থ খালেদা জিয়াকে জোর করে আদালতে আনা হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়া আদালতে এসেছেন। আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। মামলার আলামতসহ কাগজপত্র চেয়ে খালেদা জিয়ার আবেদন নাকচ করেছেন আদালত। একইসঙ্গে আদালত বলেছেন, আগামী ১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি না করলে সেদিন অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ হবে। কারাগারে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান এই আদেশ দেন বলে জানান তিনি।

আদালতে যেভাবে খালেদা জিয়া: বেলা ১২টা ৪০ মিনিটে হুইল চেয়ারে করে কারাগার থেকে খালেদা জিয়াকে আদালতের এজলাস কক্ষে আনা হয়। পরনে ছিল জাম রঙের শাড়ি। আদালতে আসার পর বিচারক এজলাসে আসেন। আদালতে দেখা যায়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়ার পাশের চেয়ারে বসেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফখরুল ইসলাম কথা বলেন। বেলা ১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত শুনানি চলে। শুনানি শেষ হলে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘ম্যাডামের শরীর খুব খারাপ। আজ আদালতে আসার আগে তিনি বমি করেছেন। কারাগারে তাঁর কোনো চিকিৎসা হচ্ছে না। কোনো চিকিৎসক তাঁকে দেখতে আদালতে আসেননি। তাঁর রক্ত পরীক্ষা করানো হয়নি।’

কারা কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আনতে চাইলেও তিনি আসেননি কেন-সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পিজিতে উনার (খালেদা) কোনো চিকিৎসা হয় না। আমরা বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার জন্য বলছি। কিন্তু তাঁকে নেওয়া হচ্ছে না। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসককে পাঠানো যেতে পারে।’

বিএনপি নেতা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া যে চিকিৎসক চান সেই চিকিৎসক দিয়ে তাঁর চিকিৎসা করানোর দাবি জানাচ্ছি। তিনি সাংবাদিকদের জানান, শুনানির সময় তিনি আদালতে দেখেছেন, খালেদা জিয়া মাথা সোজা রাখতে পারছিলেন না। পায়ে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে তাঁর।

শুনানিতে যা হলো: শুনানির শুরুতে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে বলেন, এই মামলায় খালেদা জিয়া ছাড়া অপর আসামিদের পক্ষে অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানি শেষ হয়েছে। আগের শুনানির দিনও খালেদা জিয়ার পক্ষে সময় নেওয়া হয়। তখন খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার আদালতকে বলেন, শুনানির জন্য মামলার কাগজপত্রের অনুলিপি চেয়ে আদালতে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সেই মামলার কাগজপত্রের অনুলিপি দেওয়া হয়নি। ওই কাগজপত্র পেলে অল্প সময়ের ব্যবধানে শুনানি করবেন। এ জন্য সময় চান। তখন মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে বলেন, খালেদা জিয়ার পক্ষে কাগজপত্র চেয়ে মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্ব করার চেষ্টা চলছে। আদালত তখন বলেন, আগেও তিনি সময় দিয়েছেন। কিন্তু আপনারা শুনানি করছেন। যে আবেদন দিয়েছিলেন তা নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন।

খালেদা জিয়ার মামলার শুনানি শেষে আদালতের সামনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: আসাদুজ্জামান
খালেদা জিয়ার মামলার শুনানি শেষে আদালতের সামনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: আসাদুজ্জামান

আদালত ঘোষণা দেন, নকল চেয়ে খালেদা জিয়ার আবেদন নাকচ করা হলো। খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতকে বলেন, মামলার কাগজপত্র পাওয়া আসামির আইনি অধিকার। অভিযোগ গঠনের শুনানির আগে মামলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তাঁরা দেখতে চান। জবাবে মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে বলেন, বিচারে যে কাগজপত্র ব্যবহার করা হবে সেই সব কাগজপত্র আসামি পক্ষ দেখার সুযোগ পাবে। বিচার তো শুরু হয়নি। খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের উদ্দেশে আদালত বলেন, সব আসামি দরখাস্ত দিয়ে আদালতে অভিযোগ গঠনের শুনানি করেছে। বারবার বলার পরও আপনারা আবেদন করেননি। শুনানির নতুন দিন ঠিক করে বিচারক এজলাস ত্যাগ করলে খালেদা তাঁর আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন। আইনজীবীদের কাছে জানতে চান, কেন মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করছেন না? তখন এ জে মোহাম্মদ আলীসহ অন্যরা খালেদা জিয়াকে জানান, আগামী শুনানির দিন মামলা থেকে খালেদার অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করবেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, কাগজপত্রের অনুমতি চেয়ে করা আবেদন খারিজের আদেশের বিরুদ্ধে কী আইনি প্রতিকার তাঁরা পেতে পারেন সে ব্যাপারে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে বসবেন।

দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়া গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন।

নাইকো মামলার সার সংক্ষেপ: বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করে। ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে এই মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুদক।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাস ক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডিয় কোম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেওয়ার’ মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন। আসামি পক্ষ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করলে হাইকোর্ট ওই বছরের ৯ জুলাই এই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন এবং রুল দেন। প্রায় সাত বছর পর ২০১৫ সালের ১৮ জুন হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি করেন। একই সঙ্গে খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। পরে ওই বছরের ডিসেম্বরে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন খালেদা জিয়া।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সাংসদ এম এ এইচ সেলিম এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া-বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।