পাবনার সাঁথিয়ায় কাঁচা রাস্তায় ভাঙা সেতু

ভাটো সোনাতলা থেকে পাটগাড়ি পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা ও সেখানকার ভাঙা সেতুর কারণে ৩০ গ্রামের মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।  প্রথম আলো
ভাটো সোনাতলা থেকে পাটগাড়ি পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা ও সেখানকার ভাঙা সেতুর কারণে ৩০ গ্রামের মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। প্রথম আলো

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ভাটো সোনাতলা থেকে পাটগাড়ি পর্যন্ত দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কাঁচা রাস্তাটিতে দীর্ঘদিনেও লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে সাঁথিয়া উপজেলার অন্তত ৩০ গ্রামের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। বছর তিরিশেক আগে এ রাস্তায় একটি সেতু নির্মাণ করা হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেটি ভেঙে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর বর্ষায় দুই কিলোমিটার রাস্তার বেশির ভাগ অংশ যেমন পানিতে তলিয়ে যায়, তেমনি সেতুটির সংযোগ সড়কের দুই পাশের মাটি ধসে পড়ে। এতে রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী লোকজন চরম দুর্ভোগে পড়ে।

এলাকাবাসী জানান, ভাটো সোনাতলা থেকে পাটগাড়ি পর্যন্ত কাঁচা রাস্তাটি পাকা করার দাবি এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের। এ রাস্তা দিয়ে সাঁথিয়া উপজেলার সোনাতলা, সরিষা, পাটগাড়ি, নাগডেমড়া, খামার সানিলা, ফেচুয়ান, হাঁড়িয়া, চিনানাড়ি, তেঘরি, ভিটাপাড়া, আটিয়াপাড়া, সেলন্দাসহ অন্তত ৩০ গ্রামের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করে। এসব গ্রামের মানুষ কৃষি, তাঁত ও দুগ্ধজাতীয় পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। উৎপাদিত পণ্য হাটবাজারে নেওয়ার জন্য এ রাস্তাটিই সবচেয়ে সুবিধাজনক। রাস্তাটির বেশির ভাগ অংশ পড়েছে ভেদাগাড়া নামের একটি বিলের মধ্যে। এলাকাবাসীর প্রয়োজনের তাগিদে ৫০ বছরের বেশি সময় আগে থেকে এখানে রাস্তা গড়ে ওঠে। এ রাস্তায় একসময় গরুর গাড়ি চলাচল করত। পরে ওই রাস্তার একটি খালের ওপর বছর তিরিশেক আগে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেতু হলেও রাস্তাটি থেকে যায় আগের মতো কাঁচা। ফলে রাস্তা দিয়ে রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেলের মতো ছোট যানবাহন ছাড়া ভারী যান চলাচল করতে পারে না। এ ছাড়া বর্ষা এলে রাস্তার বেশির ভাগ অংশই পানিতে তলিয়ে যায় বলে তখন এ পথে যাতায়াত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, কাঁচা রাস্তাটি দিয়ে ছোট যানবাহন চলাচল করাও প্রায় অসম্ভব। রাস্তায় খালের ওপর জরাজীর্ণ একটি সেতু। এটির একদিকের রেলিং অনেকটাই ভেঙে পড়েছে। সেতুতে ওঠার সংযোগ রাস্তাটিতে কোনো রকমে মাটি ফেলে চলার উপযোগী করা হয়েছে। এলাকাবাসী জানান, প্রতিবছর বর্ষায় সংযোগ রাস্তাটি ধসে পড়ে। সংযোগ রাস্তাটিসহ কাঁচা রাস্তার অনেক স্থানই প্রতিবছর বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ দিয়ে লোক দেখানো মেরামত করা হয়। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয় না।

সাঁথিয়ার সোনাতলা গ্রামের ফজর আলী (৭০) বলেন, ‘বিরিজ হওয়ার পর ৩০ বছর পার হয়া গেল। আইজও বিরিজের দুই দিকের কাঁচা রাস্তা পাকা হলো না। অথচ বিরিজ হওয়ার পর আমরা ৩০ গিরামের মানুষ এই রাস্তাটা নিয়্যা স্বপ্ন দেইখ্যাই আসতেছি।’

একই গ্রামের মিলন হোসেন (৩০) বলেন, ‘রাস্তাটি ব্রিজ থেকে বেশ নিচু। দিন দিন আরও নিচু হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে বর্ষায় ডুবে যায়। ওই সময়টায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করা লাগে।’
স্থানীয় নাগডেমড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হারুনূর রশীদ বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের প্রতিটি মানুষের প্রাণের দাবি এই রাস্তার উন্নয়ন। রাস্তাটি উঁচু ও পাকা করা হলে আমার ইউনিয়নের আমূল পরিবর্তন ঘটবে। রাস্তাটির উন্নয়নের ব্যাপারে আমি বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়ে যাচ্ছি।’