কক্সবাজারে তিন দিনে ৫৫ ট্রলারে ডাকাতি

গভীর সাগর থেকে মাছ আহরণ করে ঘাটে ফেরার সময় জলদস্যু বাহিনীর কবলে পড়ছে মাছ ধরার ট্রলার। দস্যুরা অস্ত্রের মুখে জেলেদের জিম্মি করে লুট করছে আহরিত মাছ, মাছ ধরার জাল। ক্ষেত্র বিশেষে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য দস্যুরা ট্রলারসহ জেলেদেরও অপহরণ করছে। এতে বিপাকে ট্রলার মালিক ও জেলে শ্রমিকেরা।
ট্রলার মালিক সমিতি সূত্র জানায়, গত তিন দিনে সেন্ট মার্টিন, টেকনাফ, উখিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপকূলে অন্তত ৫৫টি ট্রলার জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। এ সময় দস্যুরা কোটি টাকার মাছ, জাল লুট করেছে। মুক্তিপণ আদায়ের জন্য ১০ জন জেলেসহ ৫টি ট্রলার অপহরণ করেছে। কিন্তু ট্রলারের মালিকেরা আইনগত সহযোগিতা চাইতে পারছেন না। কারণ এখন সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ১৬-২২ মার্চ পর্যন্ত জাতীয় জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ চলছে। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কয়েক হাজার ট্রলার সাগরে ইলিশ ধরছে বলে খবর আছে। গভীর সাগরে গিয়ে বিপুলসংখ্যক ট্রলারে অভিযান চালানোর মতো আধুনিক জলযান ও জনবল কোনোটা মৎস্য বিভাগের নেই। ব্যাপারে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
গত রোববার সকালে সেন্ট মার্টিন উপকূলে দস্যুদের কবলে পড়ে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের মিস্ত্রিপাড়ার বাদশাহ মিয়ার একটি ট্রলার। এ সময় দস্যুরা ট্রলারের ১২ জেলেকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কয়েক লাখ টাকার মাছ লুট করে।
ট্রলারের মালিক বাদশাহ মিয়া বলেন, এখন ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরা পড়ছে। ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ তাঁদের জানা নেই। তিনি বলেন, একই সময় তাঁর এলাকার আরও ১৪টি ট্রলারে লুটপাট চালায় দস্যুরা।
শাহপরীর দ্বীপ মৎস্যজীবী বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হাসান বলেন, গত তিন দিনে সেন্ট মার্টিন ও টেকনাফ উপকূলে ৪২টি ট্রলারে লুটপাট চালিয়েছে দস্যু বাহিনী। এ সময় দস্যুদের বেদম প্রহারে ১০-১২ জন জেলে আহত হয়েছেন।

ট্রলার মালিক সূত্র জানায়, গত তিন দিনে মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও উখিয়া উপকূলে আরও ১৩টি ট্রলার দস্যুদের কবলে পড়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি ট্রলারসহ ১০ জেলের সন্ধান মিলছে না। মুক্তিপণ আদায়ের জন্য জেলেদের অপহরণ করা হয়েছে বলে সন্দেহ করছে ট্রলারের মালিকেরা।
মহেশখালী থানার ওসি প্রভাষ চন্দ্র ধর বলেন, সম্প্রতি উপকূলে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ১১ অস্ত্রসহ ২৫ জন দস্যুকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু গভীর সাগরে গিয়ে জলদস্যুদের গ্রেপ্তার করার মতো আধুনিক জলযান পুলিশের নেই।
র‍্যাব-১৫ টেকনাফ ক্যাম্পের ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট (বিএন) মির্জা শাহেদ মাহাতাব প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাগরে ট্রলারে ডাকাতির খবর শুনেছি, বিষয়টি অনুসন্ধান করা হচ্ছে।’