তনু হত্যার আসামি তিন বছরেও শনাক্ত হয়নি

>

• ২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে তনুর লাশ উদ্ধার
• কলেজছাত্রী তনু হত্যাকাণ্ডের আজ তিন বছর
• তদন্ত স্থবির হয়ে থাকার অভিযোগ পরিবারের
• কুমিল্লায় প্রতিবাদ–সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি

কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলার তদন্ত তিন বছরেও শেষ হয়নি। এমনকি এ মামলার আসামিও শনাক্ত হয়নি। তনুর পরিবারের অভিযোগ, গত এক বছর তদন্তকাজ স্থবির হয়ে আছে। তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তাদের সঙ্গে মামলার বিষয়ে যোগাযোগ করছে না।

২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাস এলাকার পাওয়ার হাউসের অদূরে ঝোপ থেকে কলেজছাত্রী তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের আজ তিন বছর। এ উপলক্ষে আজ সকালে কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের উদ্যোগে শোকর‍্যালি, বাদ জোহর মসজিদে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটার মহড়াকক্ষে মিলাদ ও স্মরণসভার আয়োজন করেছে। বিকেল চারটায় কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে গণজাগরণ মঞ্চ ও প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে।

তনুর মা আনোয়ারা বেগম গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গরিব দেইখ্যা আমার কেসটা তিন বছর কোনো খবর নাই। গরিব দেইখ্যা বিচার পাই না। আমার শেষ ইচ্ছা, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সাক্ষাৎ করতে চাই। তাঁকে মনের আবেগটা বলতে চাই। সার্জেন্ট জাহিদ ও তাঁর স্ত্রীকে আইনের আওতায় আনলে কেসটা একটা পর্যায়ে আসত। আদালতে উঠত। এক বছর ধরে কোনো খবর নেই।’

মামলার বাদী তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, ‘১৬ কোটি মানুষ এই মামলার দিকে চেয়ে আছে। কিন্তু কেস আছে কি নাই, তা–ও বলতে পারছি না। সিআইডি কোনো যোগাযোগ রক্ষা করছে না।’

তনুর পরিবারের অভিযোগ ও মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘যাঁদের ডিএনএ নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর প্রোফাইল তৈরি করে ম্যাচিং করা হবে। এগুলো নিউইয়র্ক ও ইংল্যান্ডে করা হয়। এরপর আলামতের সঙ্গে মেলানো হবে। সোয়াব কাঠি দেখা হবে। তদন্ত আরও সতর্কভাবে চলছে। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ ঠিক নয়। আমরা তদন্ত করে যাচ্ছি। বাদীর সঙ্গেও দেখা হচ্ছে।’

তনুর পারিবারিক সূত্র বলেছে, তনু হত্যার ঘটনায় ২০১৬ সালের ২১ মার্চ তাঁর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। এ পর্যন্ত এই হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তিনবার বদল করা হয়। ২০১৬ সালের ২১ মার্চ তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ পান ওই থানার উপপরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলাম। ওই বছরের ২৫ মার্চ তদন্তভার দেওয়া হয় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি এ কে এম মঞ্জুর আলমকে। ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত তদন্ত করেন সিআইডির কুমিল্লার পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম। পরে তদন্তভার পান সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন। ২০১৬ সালের ১৬ মে তনুর পোশাকে পাওয়া বীর্য পরীক্ষা করে তিনজনের ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া গেছে বলে সিআইডি জানিয়েছিল। এরপর তনুর পোশাকে পাওয়া তিনটি ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে সন্দেহভাজন কয়েকজন ব্যক্তির ডিএনএ মেলানো হয়। তবে কোনো ফল আসেনি। জালাল উদ্দিন তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর কয়েকজনের সঙ্গে ডিএনএ মেলানোর উদ্যোগ নেন। এর মধ্যে তনুর নাট্যসংগঠন ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের পাঁচজন কর্মীর সঙ্গে ডিএনএ মেলানো হয়। ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর সকালে সিআইডির সদর দপ্তরের নতুন ভবনে তনুর বাবা, মা, ভাই আনোয়ার হোসেন রুবেল, চাচাতো বোন লাইজু জাহান ও চাচাতো ভাই মিনহাজ হোসেন গিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে সার্জেন্ট জাহিদের নাম বলেন।

গণজাগরণ মঞ্চ কুমিল্লার অন্যতম সংগঠক খায়রুল আনাম রায়হান বলেন, একটি মামলা এভাবে স্থবির থাকতে পারে না।

কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক সুমী আক্তার বলেন, ‘তনু আমার সরাসরি ছাত্রী। বেঁচে থাকলে আগামী ৭ এপ্রিল তনু অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিত। তাঁর জন্য আজ বিভাগের পক্ষ থেকে শোকর‍্যালি ও মিলাদ হবে।’