ধরতে পারলেই টিসি?

নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীর অন্যান্য এলাকার মতো সায়েন্স ল্যাব মোড়েও শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। বেলা ১১ টার পর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে এসে অবস্থান নেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্যে ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের বেশ কিছু শিক্ষার্থীও ছিলেন।

বেলা দুইটার দিকে সেন্ট্রাল রোডে অবস্থিত ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের ক্যাম্পাস থেকে কয়েকজন শিক্ষক বের হয়ে আসেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন কলাবাগান থানার বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। শিক্ষকেরা বের হয়ে এসেই সায়েন্স ল্যাব মোড়ে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের দিকে দৌড়াতে থাকেন আর বলতে থাকেন ‘ধরতে পারলেই টিসি’ (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছাড়পত্র)।

শিক্ষকদের দেখে আইডিয়াল কলেজের যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলন করছিলেন তারা দৌড়ে সরে যান। আন্দোলনে অংশ নিয়ে টিসি পাওয়ার ভয়ে এই কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে আশপাশের সড়কে, দোকানের ভেতরে অবস্থান নেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ জসীম উদ্দীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুপুর সোয়া একটার দিকে কলেজ ছুটি হয়েছে। এর আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা কলেজের ক্যাম্পাসেই ছিল। তারা যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলায় না জড়ায় সে বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।’ আন্দোলনে অংশ নিলে কলেজ থেকে টিসি দেওয়া হবে এমন বক্তব্য দিতে শিক্ষকদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে উপস্থিত ছিলেন কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন আরাফাত খান।

এর আগে বিইউপির শিক্ষার্থী আবরার আহমেদের বাস চাপায় নিহতের ঘটনায় আজ বুধবার বেলা ১১টার পর সায়েন্সল্যাব মোড়ে এসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। সিটি কলেজ, ধানমন্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ স্কুল, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি বিজ্ঞান কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী তাতে অংশ নেন।

‘নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘রাজীব-মীম-আবরার, আর কত লাশ দরকার’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ নানান স্লোগান দেন। বিইউপির শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ নিহতদের ঘটনায় উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম আবরারের নামে ফুটওভার ব্রিজ করে দেওয়ার কথা বলেছেন। তবে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ফুটওভার ব্রিজ নয়, তারা নিরাপদ সড়ক চান।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে মিরপুর সড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা, ২০ মার্চ। ছবি: সুহাদা আফরিন
নিরাপদ সড়কের দাবিতে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে মিরপুর সড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ঢাকা, ২০ মার্চ। ছবি: সুহাদা আফরিন

দিদারুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘মেয়র কত ফুটওভার ব্রিজ করবেন? আমরা তো ব্রিজ চাইনি, নিরাপদ সড়ক চেয়েছি। আগের আন্দোলনে প্রশাসনের টনক নড়েনি। আমাদের আবারও রাস্তায় নামতে হলো।’

শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে সায়েন্সল্যাব মোড়ে গাড়ি চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। মিরপুর রোডের দুই পাশেই যানবাহন আটক পড়ে। কিছুক্ষণ পরে শিক্ষার্থীরা সুশৃঙ্খলভাবে লেন মেনে যান চলাচলের চেষ্টা শুরু করেন। অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি বাহনগুলো নিজেরাই এগিয়ে দেন।

সায়েন্সল্যাব মোড় সংলগ্ন আড়ংয়ের পাশের সড়কে চলাচলকারী রিকশাগুলো অধিকাংশ সময় বিশৃঙ্খলভাবে থাকে। আজকে শিক্ষার্থীরা সেই রিকশাগুলোকেও এক সারিতে নিয়ে আসে। রিকশার সারি সোজা করার কাজ করছিলেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাঁরা বলেন, গত বছর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় এখানকার রিকশা সুশৃঙ্খলভাবে চলেছিল। পরে আবার বিশৃঙ্খল হয়ে যায়। তার মানে যারা সড়কের দায়িত্বে আছেন তাদের সদিচ্ছার অভাব থাকে।

বেলা তিনটার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে যান। তাঁরা জানান, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আগামীকাল সকাল ১০টায় তারা আবার একই স্থানে অবস্থান নেবেন।